প্রশ্নফাঁসে ১৯ ধাপ ঝুঁকিপূর্ণ, ৪ বছরে ৬৩টি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসঃ টিআইাবি !!!!! - SongbadProtidin24Online.com

সর্বশেষ সংবাদ

SongbadProtidin24Online.com

সবার আগে নতুন সংবাদ প্রতিদিন

আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য বিজ্ঞাপন দিন

test banner

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Wednesday, August 5, 2015

প্রশ্নফাঁসে ১৯ ধাপ ঝুঁকিপূর্ণ, ৪ বছরে ৬৩টি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসঃ টিআইাবি !!!!!


প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে শুরু করে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ পর্যন্ত প্রায় ৪০টি ধাপের মধ্যে কার্য সম্পন্ন হয়। এ ধাপগুলোর মধ্যে ১৯টি ধাপই প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইাবি)। আর এসব ধাপেই গত চার বছরে মোট ৬৩টি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে।

তবে এই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাত্র ৪ জনকে এবং ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে একটি পরীক্ষা ও একটি কেন্দ্র। আর গত পাঁচবছরে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে এ পর্যন্ত চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

বুধবার রাজধানীর ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস : প্রক্রিয়া, কারণ ও উত্তরণের উপায়’ -শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনটি উস্থাপন করেন সংস্থাটির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার রঞ্জন রায় এবং রুমানা শারমিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, উপ- নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং পরিচালক মোহাম্মদ রফিুকল হাসান প্রমুখ।

টিআইবির এই গবেষণা প্রতিবেদনে হয়েছে, প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪০টি ধাপ রয়েছে। এসব ধাপের মধ্যে ১৯টি ধাপে প্রশ্ন ফাঁসের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আর এসব ধাপে এসেই বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন ফাঁস করা হয়। ধাপগুলো হলো- প্রথম প্রশ্ন প্রণয়ন, প্রশ্নপত্রের মডারেশন, প্রুফ রিডিং, পাণ্ডুলিপি কম্পোজ, পুনঃ প্রুফ রিডিং, কম্পোজার কর্তৃক সংরক্ষণ, মুদ্রণ কাজ, প্রশ্নপত্র তৈরি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ প্যানেল কর্তৃক চূড়ান্তকরণ, বিজি প্রেসে প্রেরণ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ, প্যাকেটিং তালিকা অনুযায়ী প্যাকেটজাতকরণ, বোর্ড কর্তৃক গ্রহণ, পরীক্ষার দিন সিলগালা খোলা, ঐ দিনের প্রশ্ন গ্রহণ ও পুনঃ সিলগালা করা, পরীক্ষার পূর্বদিন ট্রাংক খোলা ও প্যাকেট যাচাই, পরীক্ষার কেন্দ্র কর্তৃক প্রশ্ন গ্রহণ, থানায় বা ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষণ এবং শিক্ষকদের নিকট সরবরাহ পর্যন্ত।

প্রতিবেদনে বলা আছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডের নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশ্নকর্তা নিয়োগ করার জন্য শিক্ষক বাছাই করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রশ্ন প্রণয়নের প্রাথমিক কার্যক্রম। তবে এই শিক্ষক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়টিকে পুঁজি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য স্কুল ও কোচিং সেন্টারে সাজেশন হিসেবে দেয়া হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের দ্বারা প্রশ্ন চূড়ান্ত হয়ে যায় বলে এ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের একাংশের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হয়। আবার মডারেশন পর্যায়ে প্রশ্ন চূড়ান্ত হয়ে যায় বলে এ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একাংশ প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

অপর দিকে কম্পোজার প্রশ্ন দেখার সুযোগ পান বলে কম্পোজ করার সময় এবং কম্পোজ হয়ে গেলে সেটির প্রুফ দেখার সময়। ছাপানোর কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এককভাবে বা গোষ্ঠীগতভাবে প্রশ্ন মুখস্ত করে প্রশ্ন ফাঁস করেন। আবার কম্পোজের পর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কম্পোজার কর্তৃক সংরক্ষণের সময়, মুদ্রণ কাজ শেষে প্রশ্নপত্র চূড়ান্ত আকার ধারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকেন। সেই সঙ্গে, প্রশ্ন গণনা ও প্যাকেট করার সময়, বিতরণের আগে বোর্ডে সংরক্ষিত থাকা অবস্থায় বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাংশের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হয়।

আর প্রশ্ন সংরক্ষণ ও বিতরণের সময় স্থানীয় প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে যোগসাজশের মাধ্যমে ফাঁস হয়। থানায় বা ভল্টে সংরক্ষণ করে রাখার সময় রাতের বেলা চাবিওয়ালা পিয়নের মাধ্যমে। প্রশ্নের প্যাকেট পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে খোলার নিয়ম থাকলেও এক থেকে দুই ঘণ্টা আগেই সিলগালা প্যাকেট খুলে হাতে লিখে বা মুঠোফোনে প্রশ্নের ছবি তুলে খুদে বার্তা, ইমেইল, ফেসবুক, ভাইবারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেয় শিক্ষকরা।

ফাঁসকৃত প্রশ্ন ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‍ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ এবং কতিপয় কোচিং সেন্টার বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহ ও ফটোকপি করে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে বিতরণ করে। এছাড়া গাইডবইয়ের ব্যবসায়ীরা সাথে প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের মধ্যমে। ফটোকপি দোকানগুলো, মোবাইল বা ওয়েবসাইট অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটের পোস্ট বা লিংকের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আবার ফাঁসকৃত প্রশ্ন পেলে শিক্ষার্থী,অভিভাবক, বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজন সেগুলো অন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরকে স্বেচ্ছায় প্রদান ও প্রচার করে।

এসব প্রশ্ন ফাঁসের কারণ হিসেবে বলা টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্ত কমিটি গঠন ও পরীক্ষা স্থগিত করে পরোক্ষভাবে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করলেও প্রত্যক্ষভাবে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টিকে অস্বীকার করা হয় নিয়মিত। অনেক সময় ‘সাজেশন কমন পড়া’ আর ‘প্রশ্ন ফাঁস’ হওয়া এক নয় বলে যুক্তি দেখানো হয়। এসব ছাড়াও আইনের শাসনের ঘাটতি, প্রশ্ন তৈরি ও প্রদানের দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও সময়সাপেক্ষ, একই শিক্ষক প্রতিবছরই প্রশ্ন প্রণেতা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া, বিজি প্রেসে জনবলের ঘাটতি, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করা এবং প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ১৯৭৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে এই প্রবণতা শুরু হয়। তবে গত পাঁচ বছরে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ একটি নিয়মিত ঘটনা হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার বছরে বিভিন্ন বিষয়ের মোট ৬৩টি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তার মধ্যে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের পিইসিই ও জেএসসি পরীক্ষার সবগুলো পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। তবে এখন পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে মাত্র চারজনকে গ্রেপ্তার, চারজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ ও মামলা দায়ের এবং একটি পরীক্ষা ও একটি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়। আর গত পাঁচবছরে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে এ পর্যন্ত চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এসময় টিআইবির পক্ষ থেকে প্রশ্ন ফাঁস রোধে কিছু সুপারিশ করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- প্রশ্ন ফাঁস রোধে সংশ্লিষ্ট আইনগুলোর ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যেমন- ‘পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) (সংশোধন) আইন, ১৯৯২’ এর ৪ ধারা পুনরায় সংশোধন করে শাস্তির মাত্রা পূর্বের ধারা অনুযায়ী ১০ বছর করতে হবে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কোচিং সেন্টার নিষিদ্ধকরণে সরকারের ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ এর অস্পষ্টতা দূর করে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। গাইড বইয়ের আদলে প্রকাশিত সহায়ক গ্রন্থাবলি বন্ধে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

তথ্য প্রযুক্তির প্রচলিত আইনের অধীনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধাপ কমাতে প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণের কাজটি পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হবে এবং প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গঠিত যেকোনো তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Responsive Ads Here