আজ পিনাক-৬ লঞ্চ ট্রাজেডির ছয় বছরঃ দোষীদের এখনো বিচার না হওয়ায় নিহত ও নিখোঁজ পরিবারগুলোর ক্ষোভ - SongbadProtidin24Online.com

সর্বশেষ সংবাদ

SongbadProtidin24Online.com

সবার আগে নতুন সংবাদ প্রতিদিন

আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য বিজ্ঞাপন দিন

test banner

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Tuesday, August 4, 2020

আজ পিনাক-৬ লঞ্চ ট্রাজেডির ছয় বছরঃ দোষীদের এখনো বিচার না হওয়ায় নিহত ও নিখোঁজ পরিবারগুলোর ক্ষোভ

মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবি। এক ভয়াবহ ট্রাজেডির নাম। ভয়াবহ লঞ্চ ডুবিতে সরকারি হিসেবে ৪৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার ও ৫৩ জন নিখোঁজ হলেও ৬ বছরেও বিচার সম্পূর্ণ হয়নি দুনিয়া কাপানো এ ঘটনার। বিচার সম্পূর্ণ না হওয়ায় এ দূর্ঘটনায় জড়িত সন্দেহে করা ২টি মামলার আসামিরা রয়েছেন জামিনে। ৬ বছর অতিবাহিত হলেও দোষীদের বিচার না হওয়ায় নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ। লঞ্চটিতে উঠার আগে বিশ্ব কাপানো স্বর্না হিরাসহ ৩ বোনের সেলফিই এখন পরিবারের একমাত্র সম্বল।
একই উপজেলার ফরহাদের পরিনতি আরও ভয়াবহ। ফরহাদসহ পরিবারের ৪ জনের কারোরই লাশ পাওয়া যায়নি। নেই কোন স্মৃতির ছবিও। নিখোঁজ অর্ধ শতাধিক পরিবারের কাউকেই দেয়া হয়নি কোন অনুদান। আর অজ্ঞাত হিসাবে ২১ জনের লাশ দাফন হলেও ডিএনএ নমুনাই রয়ে গেছে মেলেনি পরিচয়। আজো সন্ধান মেলেনি লঞ্চটিরও।
সরেজমিন একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে ঈদুল ফিতরের পর ৪ আগস্ট ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বোঝাই আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে শিবচরের কাওরাকান্দি ঘাট থেকে পিনাক-৬ লঞ্চটি উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে মাওয়ার অংশে ডুবে যায়। সরকারি ভাবে ওই ঘটনায় ৪৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ থাকে ৫৩ জন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই স্বপরিবারে ও নিখোজদের অনেকেই স্বপরিবারে রয়েছে।
শিবচর পৌর এলাকার মো. নুরুল হক মিয়ার ঢাকার শিকদার মেডিকেলে ডাক্তারী পড়ুয়া মেয়ে- নুসরাত জাহান হিরা ও রাজধানীর বীরশ্রেষ্ট নুর মোহাম্মদ কলেজের ছাত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্ণা এবং তারই ভায়রার মেয়ে চীনের জইনুস মেডিকেল কলেজের ছাত্রী শরিয়তপুরে গঙ্গানগর এলাকার জান্নাতুল নাঈম লাখী এই দুর্ঘটনায় ৩ জন মারা গেলেও উদ্ধার হয়েছে ২জনের মৃতদেহ। একজন এখনো নিঁখোজ।
এছাড়া শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা গ্রামের প্রায় অশীতিপর বৃদ্ধা রিজিয়া বেগমের এক ছেলে মিজানুর রহমান,পুত্রবধূ রোকসানা বেগম, আড়াই বছর বয়সের নাতি মাহিন এবং এগার বছর বয়সের নাতনি মিলিসহ একই পরিবারের ৪জন নিহত হন। এদূঘর্টনার পরপরই মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানা ও মেরিন কোর্টে ২ টি মামলা হয়। আসামিরা গ্রেফতার হলেও বর্তমানে আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। তবে ৬ বছর অতিবাহিত হলেও দোষীদের বিচার না হওয়ায় নিহত ও নিখোজদের স্বজনদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে।
এ দূর্ঘটনায় উদ্ধারকৃত ৪৯ টি লাশের মধ্যে ২৮টি লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয় আর ২১ জনকে শিবচর পৌরকবর স্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। রেখে দেয়া হয় ওই ২১ জনের ডিএনএ টেস্টের নমুনা। তবে এই ৬ বছরেও কেউ শনাক্ত করতে আসেনি লাশগুলোর। মাটির নিচে গলে পচে নিঃশেষ হয়ে আছে পরিচয়টুকুও। সরকারি হিসেবেই নিখোঁজ থাকে আরো ৫৩ জন। তবে বেসরকারী হিসেবে অন্তত শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। নিহতদের মধ্যে অনেকেই স্বপরিবারে ও নিখোঁজদের অনেকেই স্বপরিবারে রয়েছে। যে সকল পরিবারে এখনো স্বজনরা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোন সরকারী অনুদান।
যদিও ২৮ পরিচয়ধারী নিহতদের তাৎক্ষনিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে ও পরিবর্তিতে ঘোষিত ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে অনেক অসহায় পরিবারকে কাটাতে হচ্ছে মানবেতর জীবন যাপন। গত ৬ বছরেও কেউই তাদের খোঁজ নেয়নি। এতে ক্ষোভের অন্ত নেই স্বজন হারা পরিবারগুলোতে । ঘটনার পর লৌহজং ও শিবচরে স্থাপন করা হয় অভিযোগ ও তথ্য কেন্দ্র। এ ঘটনার পরপরই নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে।
নিহত হিরা ও স্বর্নার বাবা ওই লঞ্চের যাত্রী নূরুল ইসলাম মিয়া বলেন, লঞ্চের মালিকসহ ঘাট সংশ্লিষ্টদের দায়ীত্বে অবহেলার কারনে লঞ্চটি ডুবে যায়। আমার মেয়েসহ অনেক যাত্রী নিহত ও নিখোঁজ হয়। এ ঘটনার ৬ বছরেও দোষীদের কোন বিচার হলো না। গ্রেফতার হলেও তারা জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকার যদি দ্রুত দোষীদের বিচার সম্পন্ন না করে তাহলে এমন দূর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমরা এ ঘটনার দ্রুত বিচার চাই।
বিআইডব্লিউটিএর কাঁঠালবাড়ি ঘাট পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির পর এ নৌরুটে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আগে একজন পরিবহন পরিদর্শক তিনটি ঘাটের দায়িত্ব পালন করতো। পিনাক দূর্ঘটনার পরে প্রতিটি ঘাটে একজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়াসহ অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শিবচর পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, অজ্ঞাত ২১ জনের লাশ পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা সংরক্ষন করা হয়েছে। পুলিশের মাধ্যমে ডিএনএ শনাক্ত করে যদি কেউ আসে তবে পরিবারের কাছে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পিনাক ৬ লঞ্চ ডুবিতে অনেকে প্রান হারিয়েছেন। অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তবে এ দূর্ঘটনার পর থেকে এ নৌরুটে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারী রাখা হচ্ছে। ঘাট ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হয়েছে। কোনভাবেই লঞ্চে ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ আইন অমান্য করলে সাথে সাথে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Responsive Ads Here