লন্ডনভিত্তিক সমুদ্র সংক্রান্ত পত্রিকা লয়েডস-এর পৃথিবীর ১০০টি ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দরের তালিকায় এক বছরে চার ধাপ এগিয়ে দেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এখন ৮৬। বাংলাদেশের নৌভিত্তিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে এ বন্দরটি। ২০০৩ সালে এর অবস্থান ছিল ৯০।
বিশ্বের সমুদ্রবন্দরগুলোর কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবছর ব্যস্ততম ১০০ সমুদ্রবন্দরের তালিকা তৈরি করে লন্ডন ভিত্তিক পত্রিকা লয়েডস।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের শেষের দিকে প্রকাশিত পত্রিকাটির প্রতিবেদনে ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দরের তালিকায় প্রথম স্থান দখল করেছে চীনের সাংহাই সমুদ্র বন্দর। এরপর আছে- সিঙ্গাপুর (সিঙ্গাপুর), সিনজেন (চীন), হংকং (চীন) বুসান (দক্ষিণ কোরিয়া), নিংবো (চীন), কুইংডাও (চীন), গুয়াংজিহো (চীন), দুবাই (আরব আমিরাত)।
তালিকায় ৮৬ নম্বরে থাকা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের পরে আছে গুয়াকুইট (ইকুয়েডর), ব্যাংকক (থাইল্যান্ড), আলেকজান্দ্রিয়া (মিশর)। ১০০তম অবস্থানে আছে চীনের শান্তু সমুদ্রবন্দর।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর সম্পর্কে লয়েডসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নৌভিত্তিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণকারী চট্টগ্রাম নৌবন্দর সম্প্রতি চরম অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও বিপুল মাল খালাসে শক্তিশালী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
২০১৩ সালে মাল খালাসে ১৫ লাখ টিউ মার্ক (২০ ফুট উচ্চতার কন্টেইনার ইউনিট) মাত্রা অর্জনে সমর্থ হয় এ বন্দর।
কার্গো খালাসের সঠিক সংখ্যাটি জানার জন্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে ব্যর্থ হওয়ার পর স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে এ বন্দরে সর্বমোট ১৫ লাখ ৪০ হাজার কন্টেইনার খালাস করা হয়েছে, যা বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হারকে নিয়ে গেছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা সত্ত্বেও এ নতুন মাত্রা অর্জনকে ‘অকল্পনীয়’ আখ্যায়িত করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির আভ্যন্তরীণ অস্থিরতাগুলোও কাজে ব্যাঘাতে ঘটাতে পারেনি। ২০১৩ সালের এপ্রিলে শ্রমিকরা নানা দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করে, তারপরও একদিনের জন্যে থেমে থাকেনি বন্দরের কাজ।’
সাফল্যের অন্যতম কারণ হিসেবে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত উন্নততর কন্টেইনার টার্মিনাল ব্যবস্থা এবং কন্টেইনার মজুদের পরিবর্তিত কৌশলের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সংবাদ প্রতিদিন২৪ অনলাইন ডটকমকে বলেন, ‘বিগত ৪ থেকে ৫ বছরে এক ঘণ্টার জন্যও বন্দরটির কাজ বন্ধ ছিল না। ২০১৩ সালে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও বন্দরের কাজে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।’
তিনি বলেন, ‘টার্মিনাল হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নতুন নতুন সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার লক্ষ্যে অটোমেশন প্রথা চালু করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে সিটিএমএস এবং টিএমআইএস। অর্থাৎ বন্দরটি আধুনিকায়নের জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আর এ কারণেই এ অবস্থান।’
চেন্নাই, করাচি এবং কলকাতা সমুদ্র বন্দরও চট্টগ্রাম বন্দরের পিছনে রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকদের ন্যূনতম চাহিদা, বেতন ও মজুরি বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ফলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ হ্রাস পেয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এতে কর্মক্ষেত্রে তাদের কাজের উৎসাহ বেড়েছে।’
বন্দর ব্যবহারকারীদের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য নিয়মিত বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সভা করে তাদের পরামর্শ গ্রহন করা হয়েছে। এতে দক্ষজনবল সৃষ্টির ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
সবচেয়ে বড় কথা বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান হ্রাস পাওয়ায় আমদানি-রপ্তানিকারকদের আস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, কর্ণফুলি নদীর মোহনায় অবস্থিত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরটি চালু হয়েছিল উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামল শুরুর দিকে। প্রথমে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা এক টাকা সেলামির বিনিময়ে লিজ ব্যয়ে কর্ণফুলি নদীতে কাঠের জেটি নির্মান করেন। এরপর ১৯৬০ সালে অস্থায়ী দুটি জেটি নির্মিত হয় এখানে।
বর্তমান অবস্থানে চট্টগ্রাম বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৮৮৭ সালে। মাত্র চারটি জেটি নিয়ে কাজ শুরু করলেও ১২৭ বছরে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পরিধি দুটোই বেড়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০টি জেটি রয়েছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর কার্গোহ্যান্ডলিংসহ বিভিন্নকাজে সেবা ও দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে দিয়ে বিগত ৫ বছরে ১২ ধাপ এগিয়েছে। ২০০৯ সালে বন্দরটির অবস্থান ছিল ৯৮।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment