ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহে কমে আসছে তামাক চাষের পরিমান। তামাকের বদলে বিকল্প ফসল চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, বেশকিছু কারণে তামাক চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষীরা। এসব কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, একই জমিতে বারবার তামাক উৎপাদন করে জমির উৎপাদন শক্তি হ্রাস, তামাক চাষের কুফল সম্পর্কে কৃষকদের সচেতনতা, উৎপাদিত তামাকের পাতা কোম্পানির ইচ্ছে মতো বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা, প্রতিশ্রুতি মতো চাষিদের কাছ থেকে তামাক না কেনা ও সময় মতো টাকা পরিশোধ না করা কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়া এন্টি টোব্যাকো অ্যালায়েন্সসহ বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠনের জনসতেনতামূলক কার্যক্রমেও তামাকচাষের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সচেতন হয়ে উঠছেন কৃষকরা। প্রতি মৌসুমেই ঝিনাইদহে তামাক চাষের আগ্রহ হারাচ্ছেন তামাক চাষিরা। ফলে তামাক উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত কোম্পানিগুলো পিছিয়ে পড়ছে। বাড়ছে মসুরি, গমসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৮ হেক্টর জমিতে ফসল জন্মে। তবে এই আয়তনের ৭৭% ভাগ জমিতে ফসল উৎপাদনের জন্য সর্বোত্তম। এখানে সারা বছরই কোনো না কোনো ফসল জন্মে। এ ছাড়া তামাক উৎপাদনের জন্য ঝিনাইদহের মাটি অত্যন্ত উপযোগী। ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগের হিসেব মতে ২০১১/১২ অর্থ বছরে তামাক উৎপাদনকারি কোম্পানিগুলো ঝিনাইদহে তামাক উৎপাদন করে ১২শ’ ১৫ হেক্টর জমিতে।
২০১২/১৩ অর্থ বছরে তামাক উৎপাদন করে ১৪শ’১০ হেক্টর জমিতে। যা ১১/১২ অর্থ বছরের তুলনায় ১শ’ ৯৫ হেক্টর বেশি। তবে ২০১৩/১৪ অর্থ বছরে তামাক উৎপাদন গত ১১/১২ অর্থ বছরের তুলনায় ১৬০ হেক্টর জমিতে কম হয়েছে।
চলতি ১৪/১৫ অর্থ বছরে তামাক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আরো কমেছে ১৮৫ হেক্টর। এ বছর এক হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে তামাক উৎপাদন হয়েছে। তবে কী পরিমান, বা কত হেক্টর জমিতে তামাক উৎপাদন করা হয়, তা কৃষি বিভাগ নির্ধারণ করে না। কোম্পানিগুলো তামাক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে থাকে। আর কৃষি বিভাগ তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে থাকেন।
সদর উপজেলার বামন বিলের মাঠে কর্মরত চাষি তপন জানান, এক বিঘা জমিতে তামাক আবাদ করতে প্রায় ৩০/৩২ হাজার টাকা খরচ হয়। তামাক যদি ভালো হয়, তাহলে ৫০/৫২ হাজার টাকা বিক্রি হতে পারে। কিন্তু তামাক চাষের ক্ষেত্রে যে কোম্পানির সঙ্গে কন্ট্র্রাক্ট করা হয়, সেই কোম্পানির কাছেই তামাক বিক্রি করতে হবে। আর কোম্পানি প্রতিনিধিরা তাদের ইচ্ছে মতো উৎপাদিত তামাকের পাতাকে ৩য়/৪র্থ শ্রেণিতে ভাগ করে থাকে।
আর প্রতিটি তামাক পাতার দাম প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেীণতে আলাদা আলাদাভাবে নির্ধারণ হয়ে থাকে। কৃষকদের আবাদের শুরুতেই অভাব-অনটনের সুযোগে তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের সুবিধার জন্য সুযোগ বুঝে কম-বেশি সার বা কীটনাশক লোন হিসেবে দিয়ে থাকে। এখানে কৃষকের কোনো স্বাধীনতা নেই।
একই স্থানে কর্মরত কৃষক শাহিন, আবুল হোসেন ও নিমাই জানান, এক সময় তারা তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতিতে ১৫/২০ বিঘা পর্যন্ত তামাকের আবাদ করেছেন। কিন্তু ফসল হওয়ার পর বিক্রির জন্য নানা টালবাহানা। কোনো উপায় নেই, কারণ বিক্রির স্থানতো একটাই। তাই এখন আর এক বিঘাতেও তামাক চাষ করছি না। সেসব জমিতে গম এবং মসুরি আবাদ করা হয়েছে।
এখানে অল্প টাকা খরচ করলেই আবাদ করা যায়। আর বিক্রির জন্য একাধিক স্থান বা বাজার রয়েছে। কোনো প্রকার ঝামেলা নেই।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ড.খান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, তামাক চাষ মাটিকে যেমন ক্ষতি করে, তেমনি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্যও চরম ক্ষতিকর। কৃষক যেন ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে ফিরে আসে এবং এই মৌসুমে গম, মসুরিসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ করে, সে জন্য আমাদের কৃষি বিভাগ নিরলস পরিশ্রম করছে। কৃষকদের অন্যান্য ফসলের আবাদের উৎসাহিত করতে মাঠ দিবস, কৃষক এবং কৃষানিদের নিয়ে উঠান মিটিং, উপজেলা পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ নিয়মিতভাবে দিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকদের মাঝে অনেক সচেতনতা আসছে এবং ক্ষতিকর তামাক চাষের দিক থেকে ফিরে আসছে।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।


No comments:
Post a Comment