মানুষ সৃষ্টির সেরা ও আল্লাহতায়ালার প্রতিনিধি। পৃথিবীর বুকে বিচরণশীল অসংখ্য সৃষ্টির মাঝে শুধুমাত্র মানুষকেই বলা হয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষের এই শ্রেষ্ঠত্ব কেবল তার স্বাধীন বিচার-বুদ্ধির কারণে।
আমরা জানি, জীবনের প্রয়োজনে বেঁচে থাকার তাগিদে প্রত্যেক প্রাণীই খায়, পান করে ও বিশ্রাম নেয়। অন্যান্য প্রাণীগুলো প্রকৃতিগত প্রয়োজন পূরণে কোনো বৈধতা-অবৈধতার ধার ধারে না। কিন্তু মানুষকে তার মনুষ্যত্বের কারণে সব প্রয়োজনে বৈধতা তথা হালাল-হারামের বিষয়টি ভাবতে হয়। সে যথেচ্ছভাবে নিজের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে না। কারণ ভালো-মন্দ, হালাল-হারাম নির্বাচন করার জন্য আল্লাহতায়ালা তাকে দিয়েছেন বিবেক-বুদ্ধি এবং শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টি শক্তি। এগুলোকে ব্যবহার করে মানুষ যদি হারামকে বর্জন করে হালালকে বেছে নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে মানুষ পরিচয়ের অযোগ্য। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি জাহান্নামের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি। তাদের অন্তর আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা বিবেচনা করে না, তাদের চক্ষু রয়েছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা সত্যকে দেখে না আর তাদের কান রয়েছে কিন্তু তা দিয়ে তারা সত্যকে শ্রবণ করে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো। বরং তা থেকেও নিকৃষ্ট। তারা হলো অবচেতন।’ -সূরা আরাফ : ১৭৯
জীবনের প্রয়োজন পূরণে বৈধতার সীমা অতিক্রম করে যাওয়ার নামই দুর্নীতি। দুর্নীতিবাজরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। তারা মানুষ পরিচয়ের অযোগ্য। দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি তার লালসার ক্ষুধা মিটাতে যা কিছু প্রয়োজন বলে মনে করে, গ্রাস করে নিতে চায়। যে কোনো উপায়ে সে নিজ আরধ্য বস্তু করায়ত্ব করতে দ্বিধাবোধ করে না। ফলে তার দ্বারা অসংখ্য মানুষ হারায় তাদের অধিকার হারায়, সমাজ ও দেশ হয়ে ওঠে অশান্ত ও সংঘাতময়।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতির বেশ কিছু ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। যার প্রেক্ষিতে সাধারণ জনগণ বিশেষভাবে চিন্তিত। এই চিন্তার বড় কারণ হলো, দুর্নীতি ক্রমেই যেনো সামাজিক রূপ নিচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বিভিন্ন স্তরে আজ দুর্নীতি শেকড় গেড়ে বসেছে। দেশের সাধারণ নাগরিকরা কোনো সরকারী দপ্তরে দায়িত্বরতদেরকে ঘুষ না দিয়ে কোনো সেবা পান না। সরকারী চাকুরির ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে টাকার অংকটাই মূল বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইদানিংতো বাস ও ট্রেনের টিকিট পেতেও গুণতে হয় অতিরিক্ত পয়সা। কালচক্রের এমনই একটা বাঁকে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি যে, সন্তান জন্মের পর কন্যা হলে পিতাকে জামাইয়ের যৌতুক মিটানোর জন্য তার জন্মের পর থেকেই ফান্ড গঠন করতে হচ্ছে। আর পুত্র বা কন্যা উভয়ের ক্ষেত্রে লেখা-পড়া শেষে তার চাকুরির জন্য প্রদেয় ঘুষের টাকা জোগাড় করতে জন্মের পর থেকেই বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হচ্ছে। এই যখন আমাদের সামাজিক অবস্থা তখন দুর্নীতি আমাদের জন্য সবথেকে বড় সামাজিক সমস্যা তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
একটা মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার আমাদের জন্য বড্ড লজ্জাষ্কর। কারণ দুর্নীতি মুসলিম পরিচয়টাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। ইসলামি বিশ্বাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— পরকালে বিশ্বাস। আর পরকালে বিশ্বাসের মূল কথা হলো, পার্থিব জীবনের সব কাজের চুলচেরা হিসাবের পর পাপের পাল্লা ভারী হলে শেষ পরিণতি চিরস্থায়ী জাহান্নাম। আর পূণ্যের পাল্লা ভারী হলে চিরস্থায়ী জান্নাত।
এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত সরল দাগে জান্নাত ও জাহান্নামের পথ চিহ্নিত করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে শরীরকে (দুর্নীতির মাধ্যমে উর্পাজিত) হারাম দ্বারা প্রতিপালন করা হয়েছে, সে শরীর জান্নাতে যাবে না।’ -বোখারি শরীফ
উল্লেখিত হাদিস থেকে এটা স্পষ্ট যে, দুর্নীতিবাজের শেষ পরিণতি হবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
লেখক : ইমাম ও খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, রাজশাহী
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment