স্বাভাবিক জীবনে মানুষকে প্রায়ই ঋণ আদান-প্রদান করতে হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও মাঝে-মধ্যে ঋণ করতেন। এমনকি তিনি অমুসলিমদের থেকেও ঋণ গ্রহণ করতেন।
ঋণপ্রদান- ঋণদাতার পক্ষ থেকে গ্রহীতার ওপর একটি অনুগ্রহ এতে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও ঋণগ্রহীতা ঋণের টাকা এক সময় পরিশোধ করে দেবে; কিন্তু তার যখন দরকার, তখন তার হাতে টাকা নেই, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে কারও কাছ থেকে চেয়ে নেবে- এমন অবস্থাও হয়তো নেই। পরে তার নিজেরই টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের দ্বারস্থ হতে হয়। তাই পরে আদায়যোগ্য হলেও ঋণগ্রহীতার জন্য তা অবশ্যই এক বড় অনুগ্রহ। আর অনুগ্রহের বদলা তো অনুগ্রহ দিয়েই হয়।
প্রিয় নবীজি (সা.)-এর জীবনালেখ্য থেকে আমরা এ অনুগ্রহের শিক্ষা পাই। সাহাবি হজরত জাবের (রা.) বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার কাছ থেকে একবার ঋণ নিয়েছিলেন। পরে যখন তিনি তা আমাকে পরিশোধ করলেন, তখন আমার পাওনার চেয়েও বাড়িয়ে দিলেন। -আবু দাউদ
এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ঋণ আদায়ের সময় নিজের পক্ষ থেকে কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া শুধু বৈধই নয়, বরং মুস্তাহাব ও সুন্নত। তবে এ বাড়িয়ে দেওয়াটা যেন কিছুতেই কোনো পূর্বনির্ধারিত শর্ত বা চুক্তির ভিত্তিতে না হয়। আগে থেকে এ ধরনের কোনো চুক্তি থাকলে তা সুদ হয়ে যাবে। কিন্তু কোনো ধরনের শর্ত ও চুক্তি ছাড়া সম্পূর্ণ নিজের পক্ষ থেকে ঋণগ্রহীতা যদি ঋণদাতাকে কিছু বাড়িয়ে দেয়, তাহলে সেটাই হবে অনুগ্রহ ইহসানের বিনিময়ে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার এক অমুসলিমের কাছ থেকে একটি উট কর্জ নিয়েছিলেন। তৎকালীন আরবে এ রীতি চালু ছিল। টাকা-পয়সার মতো মানুষ প্রয়োজনে উট কর্জ নিত। বয়স ও মানের দিক থেকে এমন আরেকটি উট দিয়েই এ ঋণ শোধ করতে হতো। কিছুদিন পর ঋণদাতা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে ঋণ পরিশোধের তাগিদ দিলেন এবং কিছুটা কঠোরতা অবলম্বন করলেন। উপস্থিত সাহাবিরা তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদের জন্য প্রস্তুত হলেন। কিন্তু হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের থামালেন এবং বললেন, তাকে কিছু বলো না। আমাদের কাছে তো তার একটি পাওনা আছে। আর পাওনাদাররা একটু শক্ত কথা বলতেই পারে। হ্যাঁ, তোমরা যদি পার, তার পাওনাটা পরিশোধের ব্যবস্থা করো। যে মানের উট সে পায়, সে মানের একটি উট কিনে এনে তাকে দিয়ে দাও। এ কথা শোনে সাহাবায়ে কেরাম অনেক খোঁজাখুঁজি করলেন, কিন্তু সে মানের কোনো উট পেলেন না। যা পেয়েছেন তা আরও ভালো মানের। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিষয়টি জেনে বললেন, ভালোটিই কিনে এনে তাকে দিয়ে দাও। উল্লিখিত হাদিসের ভাষ্যমতে, এখানে আরেকটি দিক প্রতিভাত হয়, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অমুসলমানদের সঙ্গেও লেনদেন করেছেন। তাদের তুচ্ছ ও সাধারণ অধিকারগুলোকেও বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। তার হাতে গড়া মদিনার ইসলামি শাসনে অমুসলিমরা কী পরিমাণ নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা পেত, এ হাদিসে তা ফুটে ওঠে।
বস্তুত পাওনা পরিশোধকালে পাওনাদারের কৃতজ্ঞতা জানানো এবং তার জন্য কল্যাণের দোয়া করা ইসলামের এক অনন্য শিক্ষা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবী রবীয়া (রা.) থেকে চার হাজার দিরহাম ঋণ করেছিলেন। যখন তা পরিশোধ করলেন, তখন তিনি তার জন্য এ দোয়াও করলেন- আল্লাহতায়ালা তোমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন। -নাসায়ি শরীফ
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment