সিলেটের শিশু রাজনের পর এবার চুরির অপরাধে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দক্ষিণ মালিপাড়া গ্রামে দুই জনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধরক পিটিয়েছে স্থানীয়রা।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বড়াইগ্রাম উপজেলার দক্ষিণ মালিপাড়া গ্রামের বোবার মোড়ে বুলবুল হোসেনের মুদির দোকানে চুরি হয় শুক্রবার রাতে। এ ঘটনায় রোববার বিকেলে সৌদি প্রবাসী রবিউল করিমের নির্দেশে আবু সামা (৩৬) ও শিশু শাকিল কাজী (১২) নামে দুজনকে সন্দেহমূলক আটক করে। পরে তাদের সুপারি গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধরক পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরিবারের লোকরা তাদের উদ্ধারে এগিয়ে এলে তাদেরও পিটানোর হুমকি দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতন চালানো পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যের হস্তক্ষেপে তাদের উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে ভর্তি করানো বা থানায় অভিযোগ করানো সম্ভব হয়নি। পরে তাদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় মাতব্বর আব্দুস সোবহান জানান, চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের সামাজিকভাবে সাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নেছামুদ্দিনের ছেলে রবিউলের নির্দেশে মোকলেছের ছেলে সাইদুল তাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে।
নির্যাতিত আবু সামা বলেন, ‘আমাকে অন্যায়ভাবে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আবার রবিউলের লোকরা হুমকি দিচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি হলে বা থানায় অভিযোগ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।’
রবিউল করিম বলেন, ‘সামাজিকভাবে বিচার করা হয়েছে, এভাবেই আমাদের সামাজিক বিচার করা হয়। আমি থাকায় তাদের বেশি মারধোর করা হয়নি। এখন আবার মানবিক কারণে আমিই তাদের চিকিৎসা করাচ্ছি। আর আমিতো একা নই সমাজের মহিদুল, শাহজাহান, শফিকুলসহ অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন ওই বিচারে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরে তাদের বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় নাই। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে আপোস-রফা করার জন্য আগামী বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘খবর পেয়ে বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপ-পুলিশ (এএসআই) পরিদর্শক ইউসুফ আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়ভাবে আপোস রফার পরামর্শ দিয়েছেন। সম্ভব না হলে পরে থানায় অভিযোগ করতে বলেছেন।’
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) এমরান হোসেন জানান, তিনি বিষয়টি এইমাত্র (সাংবাদিকের কাছে) শুনেছেন। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) ইউসুফ আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন বিষয়টি তার জানা নাই।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ে চুরির অপবাদে নির্মম নির্যাতনে শিশু রাজনকে হত্যা করা হয়। নির্যাতনের ঘটনা ভিডিওচিত্রে ধারন করা হয়। ময়নাতদন্তের পর তার দেহে ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ১৩ জুলাই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন বলা হয়, আঘাতের কারণে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে শিশু রাজনের মৃত্যু হয়েছে।
গত ৪ আগস্ট খুলনার টুটপাড়া এলাকার একটি গ্যারেজে পায়ুপথে কমপ্রেসারের মাধ্যমে বাতাস ঢুকিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় ১২ বছরের রাকিবকে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই নির্যাতনকারী তিনজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় বাসিন্দারা।
ভিদিওতি দেখতে ক্লিক করুনঃ https://www.youtube.com/watch?v=9-kH0o7YKN4
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment