বরিশাল থেকে রাজধানী ঢাকায় যাওয়ার প্রধান, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী মাধ্যম নৌপথ। এ কারনে বরিশাল-ঢাকা রুটে একের পর এক সংযোজন হচ্ছে অত্যাধুনিক লঞ্চ। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানীর ব্যবস্থাপনায় বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে উদ্ধোধন হতে যাচ্ছে এমভি সুন্দরবন-১০ নামে একটি বিশালাকার অত্যাধুনিক নৌযান।
সমূদ্রগামী জাহাজের আদলে নির্মিত এই নৌযানটিতে দেশে প্রথমবারের মত লিফট সংযোজন করা হয়েছে। চারতলা বিশিষ্ট নৌযানটিতে শারীরিকভাবে অক্ষম, প্রতিবন্ধী এবং রোগীদের সুবিধার্থে লিফট সংযোজনের কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
একজন চিকিৎসক, ফার্মেসী সহ হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য লঞ্চে করোনারী কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে লঞ্চে বেবী প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোড এড়িয়া, কফি হাউজ এবং ওয়াইফাই সুবিধা সহ রাখা হয়েছে নানা বিনোদনের ব্যবস্থা।
যাত্রীদের নিরাপত্তায় পুরো নৌযানটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় রাখা হচ্ছে ২৫০টি লাইফ বয়া। এছাড়া যাত্রীদের জানমাল হেফজতের জন্য রাখা হয়েছে একজন কমান্ডার সহ ৬ জন সশস্ত্র আনসার সদস্য।
সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানীর পরিচালক আবুল কালাম ঝন্টু জানান, বিশেষজ্ঞ নৌ স্থপতির নকশায় সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্যানেল প্রকৌশলীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ৩৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৫৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট সুন্দরবন-১০ লঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে দেশী-বিদেশি প্রযুক্তি নির্ভর লঞ্চটির শেষ মুহূর্তের রং ও সাজসজ্জার কাজ। লোয়ার ডেক, আপার ডেক, ৪০টি সোফা (বিলাস) এবং দুই শতাধিক প্রথম শ্রেণীর কেবিন ছাড়াও ১৫টি ভিআইপি কক্ষে অনুমোদিত যাত্রী ধারণ ক্ষমতা এক হাজার ৪০০ জন।
প্রথম শ্রেনীর কেবিনগুলো করা হয়েছে তিন তারকা আবাসিক হোটেলের আদলে। দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রে সাজানো হয়েছে প্রতিটি কক্ষ। প্রতিটি কেবিনের পাশেই রয়েছে সুবিশাল বারান্দা। সেখানে বসে নদী, আকাশসহ আশপাশের মনোরম প্রকৃতি উপভোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে। কক্ষের ভেতরে রয়েছে টেলিভিশন। এছাড়াও ৫ শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে নৌযানটির।
জার্মানীর তৈরি ২ হাজার ৭৫০ অশ্বশক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও নৌযানটির প্রথম শ্রেনী ও ভিআইপি কক্ষ সহ ডেক যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের জন্য তিনটি জেনারেটর সংযোজন করা হয়েছে। স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে একটি জেনারেটর। শক্তিশালী ইঞ্জিনের কারনে ৫ ঘন্টায় বরিশাল থেকে ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে বরিশালের গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে লঞ্চটি। ইতিমধ্যে বরিশালের বিভিন্ন নদীতে লঞ্চটি পরীক্ষামূলকভাবে ৩০ ঘন্টা চালানো হয়েছে।
এর হুইল হাউজে (চালকের কক্ষ) স্থাপন করা হয়েছে দ্বৈত পদ্ধতির রাডার-সুকান ‘ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক’ ও ম্যানুয়াল। আধুনিক রাডার ছাড়াও এতে জিপিএস পদ্ধতি সংযোজন করা হয়েছে। ফলে লঞ্চটি চলাচলরত অবস্থায় নৌপথের এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও এর আশপাশের অন্য যেকোনো নৌযানের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারবে। এমনকি ঘন কুয়াশার মধ্যেও নির্বিঘ্নে চলতে পারবে লঞ্চটি। এটি পরিচালনার জন্য প্রথম শ্রেণীর দক্ষ মাস্টার ও ইঞ্জিন কর্মকর্তা সহ মোট ৪০ জন বিভিন্ন শ্রেনীর ক্রু নিয়োগ করা হয়েছে। নৌযানটির সব শ্রেণীর যাত্রী ভাড়া অন্যান্য লঞ্চের মতোই।
বরিশাল নগরীর বেলতলা ফেরিঘাট সংলগ্ন সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানীর নিজস্ব শিপইয়ার্ডে টানা ৩২ মাস ধরে ২০০ জন শ্রমিক ‘বাংলার টাইটনিক’ হিসেবে পরিচিত জাহাজটি নির্মান করেছেন।
আগামী ২৩ জুন দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে আধুনিক নৌযানটি। তবে লঞ্চটির আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন হবে ২৫ জুন (শনিবার) বিকালে ঢাকার সদরঘাট টার্মিনালে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানসহ বরিশালের সংসদ সদস্যদের। এছাড়া সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর এম. জাকিউর রহমান ভূঁইয়া, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর এম. মোফাজ্জেল হক, লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহাবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রমসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment