পথে-ঘাটে, রাস্তার পাশে, বড় কোন গাছে, বড় কোন ফটকে, চায়ের দোকানে দেখা যায় মির্জাগঞ্জ ইয়ার উদ্দিন খলীফার মাজারের দানবক্স। এই দানবক্সগুলোতে সাধারণ মানুষজন দান করে থাকেন। কিন্তু এই দানের টাকা কোথায় যায়, কিভাবে ব্যয় হয় তা নিয়ে রয়েছে নানা ধরণের অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে যারা মাজারের উত্তরসুরি তাদেরকেই ঢুকতে দেয়া হয় না মাজারে। এছাড়া প্রত্যেক ঈদে বড় ধরণের অনুদান আসে মাজারে আর এ থেকে বড় ধরণের অর্থের আত্মসাত হয়ে থাকে।
জানা যায়, সারাদেশে এই মাজারের দানবক্স রয়েছে এক লক্ষ দশ হাজার। যার প্রতিটিতে মাসে সর্বনিম্ন পঞ্চাশ বা একশো দান উঠলে টাকার পরিমাণ হয় ষাট থেকে সত্তর লক্ষ টাকা। কিন্তু মাজারের কমিটির হিসেবে টাকার পরিমাণ ১২ থেকে ১৫ লক্ষ। এদিকে মাজারের উত্তরসুরিরা বলছে দুই মাসে টাকা আসে ৫০ থেকে ৫৫ লক্ষ টাকা। আর ওয়াকফ বাংলাদেশের তথ্য মতে, মাজার থেকে বাৎসরিক তাদের আয়ের ৫ শতাংশ হারে ওয়াকফে জমা দেয় ৫ লক্ষ টাকা। সে হিসেবে তাদের আয় বছরে এক কোটি এবং মাসে ৯ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
পটুয়াখালীতে মাজারের দানবক্সের টাকা তোলেন এমন একজনের নাম জাব্বার। তিনি বলেন, আমরা দুই মাসে বক্স খুলি। তাতে দেখা যায় প্রতি বক্সে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে ২ -৩ হাজার টাকাও থাকে। আর ঢাকাতে এর পরিমাণ সর্বনিম্ন ২ থেকে ১০ হাজার টাকা। তাদের এই ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবেই উঠে আসছে, প্রতি দুই মাসে সর্বনিম্ন প্রায় ২০ থেকে ২৫ লক্ষ দানের টাকা উধাও হয়ে যায়।
ইয়ারউদ্দিন খলীফার উত্তরসুরি হাফেজ খালিদ বলেন, আমি উত্তরসুরি হয়েও মুতাওয়াল্লী না। আর আমাকে মাজারে ঢুকতেও দেয়া হয় না। কারণ মাজারে অনেক টাকা আয় হয় যা বর্তমান কমিটির লোকজন ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। আর আমি মাজারের মুতাওয়াল্লী হলে তাদের এই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এই ঈদে বড় ধরণের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও জানান হাফেজ খালিদ।
তার মতে, মাজারের দানবক্স সংখ্যা এক লক্ষ দশ হাজার। যা থেকে প্রতি দুই মাসে আয় হয় ৫০ থেকে ৫৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু মাজারের হিসেবে আয় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। তাতে দেখা যায় প্রতি দুই মাসে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা হিসেব বহির্ভূত ভাবে লেনদেন ও খরচ হয় যার বেশির ভাগ পকেটেই ঢোকে কমিটির। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আমার পূর্ব পুরুষ এই ওয়াকফ করেছেন তার কোন আশাই পূরণ হচ্ছে না এবং আমাদের মাজারের কাছেও যেতে দেয়া হয় না।
এ বিষয়ে ইয়ার উদ্দিন খলীফার মাজারের সাধারণ সম্পাদক শহীদ মল্লিক মৌল্লিক আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, আমাদের সারাদেশে দানবক্স রয়েছে ২৭ হাজার। আর এই টাকা তোলার সারাদেশে একশ পঞ্চাশ জন লোক রয়েছে। তবে আমাদের হিসেবের বাইরেও ৭ হাজার বক্স রয়েছে, যার হিসেব আমরা পাই না। আর বেনামেও অনেকে টাকা তোলে যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। সবমিলিয়ে আমরা টাকা পাই প্রতি দুই মাসে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। মাজারে একটি মাদরাসা রয়েছে যাতে ছাত্র শিক্ষক মিলিয়ে মোট ৭০০ জন রয়েছে। তাদের জন্য এই টাকা ব্যয় করা হয়।
তিনি জানান, দানবক্সের টাকা তোলার জন্য প্রত্যেক জেলায় থানা ভিত্তিক ডাকে লিজ দেয়া হয়। যারা দানবক্সের টাকা তোলে তারা মাজারের মুতাওয়াল্লীদের সাথে যোগাযোগ করে মাসিক নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেয়ার হিসেবে সেই এরিয়ার বক্সের দায়িত্ব নেন। এতে বক্সে যত টাকাই আসুক তারা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি টাকা দেয় না। এতে আমাদের কিছুই করার নেই।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দানবক্সের টাকা তোলেন জব্বার। তিনি বলেন, প্রতি দুই মাসে আমি ২৬ হাজার টাকা দেই মাজারে। যদি টাকা কম আসে তাহলে আমি ভর্তূকি দেই আর যা বেশি হয় তা আমার লাভ।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দানবক্সের টাকা তোলেন জব্বার। তিনি বলেন, প্রতি দুই মাসে আমি ২৬ হাজার টাকা দেই মাজারে। যদি টাকা কম আসে তাহলে আমি ভর্তূকি দেই আর যা বেশি হয় তা আমার লাভ।
ঢাকার একটি থানার টাকা তোলেন মো. জালাল। তিনি বলেন, আমি মাজারে দুই মাসে টাকা দেই ৬০ হাজার। কোন সময় টাকা বেশি উঠে আবার কোন সময় টাকা কম উঠে। লাভ লস সবই আমার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ওয়াকফের প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ ভূইয়া বলেন, জনবল সংকটের কারণে আমরা চাইলেও অনেক ওয়াকফ স্টেটের খোজ খরব এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। সেজন্য তারা আয়ের যে হিসেব দেয় তাই আমাদের মেনে নিতে হয়। ওয়াকফ স্টেটগুলোতে বড় ধরণের অর্থের লেনদেনের কারণে আমাদের কাজের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, প্রভাবশালীদের চাপ অনেক বেশি থাকে। সেজন্য আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারি না।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment