মাদারীপুরে দুই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ শেষে হত্যার এক বছর পার হলেও বিচারের আওতায় আসেনি অভিযুক্তরা। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অসহায় নিহতদের দুই পরিবারের সদস্যদেরকে হুমকি দিচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে অভিযোগ করেও পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছেন না ভিকটিমের পরিবার। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।
মামলাটিকে অন্যদিকে গড়িয়ে নিতে এখনো অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়নি বলে ধারণা মানবাধিকার কর্মীদের। তবে জেলা প্রশাসক লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাদারীপুরের মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া ও হ্যাপিকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর ধর্ষণ শেষে বিষ খাইয়ে হত্যা করে তাদের-এমন অভিযোগ করেন নিহত দুই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় প্রথমে পুলিশ পরে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। কিন্তু মামলার এক বছরেও আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হয়নি। মামলার প্রধান আসামি রানা নাগাসীসহ অন্যরা গ্রেফতার হলে জামিনে বেড়িয়ে এসে প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে অসহায় ওই দুই পরিবারকে দফায় দফায় হুমিক দিচ্ছে আসামিরা এমন অভিযোগ করেন ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়টি একাধিকবার পুলিশকে জানালেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি নিহতদের পরিবারবর্গ।
নিহত সুমাইয়ার বাবা বিল্লাল শিকদার বলেন, আমার মেয়েকে হত্যার এক বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। শুরু থেকেই পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডকে গুরুত্ব দেয়নি। এখন সিআইডিতে গেছে। তবে সঠিক বিচার পাবো কিনা জানা নেই আমার। আমি এমন বিচার দাবি করি, যেন প্রতিটি বাবা তার মেয়েদের স্কুলে দিতে ভয় না পায়।
এদিকে নিহত হ্যাপির মা মুক্তা আক্তার বলেন, আসামিরা জামিনে এসে আমাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। প্রধান আসামি রানা নাগাসী কয়েকদিন আগে রাতে কয়েকজনকে নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। আমি পুলিশকে বিষয়টি বললেও কোনো সহযোগিতা পাইনি। এখন আমরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।এদিকে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় হতাশ এলাকাবাসী ও নিহতদের আত্মীয়-স্বজনেরা। তারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
মানবধিকার কর্মীরা মনে করছেন, মামলাটিকে ধামাচাপা দিতে এখনো আদালতে জমা দেয়া হচ্ছে না অভিযোগপত্র। তারা বলেন, আমরা হতাশ। কেন কোনো কারণে পুলিশ এমন করছে, বুঝছি না। আমরা এই নৃশংস হত্যার সঠিক বিচার দাবি করি।
এ ঘটনায় পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি মাদারীপুরের পুলিশের কোনো কর্মকর্তা।
বর্তমানে মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডি কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নিহত হ্যাপি ও সুমাইয়ার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে পূনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। চলতি বছর ২৭ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বদরুদ্দোজা শুভর উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়। পরে ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এখনো ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফরেনসিক রিপোর্ট আমাদের হাতে আসেনি। যে কারণে তদন্তে বিলম্ব হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। যদি নিহতদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে থাকে, আমি সঠিক বিচারের জন্যে পিপির মাধ্যমে চেষ্টা করবো।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ আগস্ট স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাদারীপুরের মস্তফাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া ও হ্যাপীকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর ধর্ষণ শেষে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয় তাদের-এমন অভিযোগে মামলা দায়ের করেন নিহত দুই স্কুলছাত্রীদের পরিবারের সদস্যরা।এ ঘটনায় সদর থানায় সাত জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা ও মাদারীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুন্যাল আদালতে ধর্ষণ শেষে বিষ খাইয়ে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এরপর এই মামলার প্রধান আসামি রানাসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হলেও পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment