রাজধানীবাসীর মলমূত্র, রান্না ও দৈনন্দিন উৎপাদিত বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এতে কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ খরচ পূরণসহ নগরীর বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণ হবে। এই পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ৮১ একর জমি অধিগ্রহণেরও কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাস্তবায়ন কোম্পানির সঙ্গে সংস্থার মেয়রের ইতিবাচক বৈঠকও হয়েছে কয়েকবার। কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন ২ থেকে ২ হাজার ২০০ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। নগরী থেকে এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে রাজধানীর মাতুয়াইলের ল্যান্ডফিল্ডে রাখা হচ্ছে। যে কারণে তা দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এসব দিক বিবেচনা নিয়ে বর্জ্যকে সম্পদ করতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এতে প্রতিদিন দুই হাজার ২০০ টনের পরিবর্তে বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫০-২০০ টন। ফলে পরিবেশ দূষণ হবে না। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও ছাই দুটোই পাওয়া যাবে। আর এই প্ল্যান্ট থেকে দৈনিক ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রকল্পের জন্য মাতুয়াইলে ৮১ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় চূড়ান্ত। এর মধ্যে ৫০ একর ল্যান্ডফিল্ড ও ৩১ একর জায়গা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হবে। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে মালয়েশিয়া, চীন, কোরিয়া, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ইউকেসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র সংস্থাটির কাছে প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। তবে একনেক অনুমোদন দিলেই আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। পরে ডিজাইনের কাজ ও তা যাচাই-বাছাইয়ের পর এলজিইডি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে ২০১৭ সালের জুন নাগাদ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আর প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে ওই বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ।
ডিএসসিসি সূত্রে আরো জানা যায়, রাজধানীতে প্রতিদিনের এই বর্জ্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে। এর মধ্যে প্লাস্টিক, কাচ, সিসা, রং, লোহা, ব্রঞ্জসহ প্রত্যেকটি বর্জ্য আলাদা করা হবে। এরপর তা আরডিএফ তৈরি করে কয়লার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তবে সিরামিক কোনো কাজে আসে না বলেই তা ল্যান্ডফিল্ডে ফেলা রাখা হবে।
এর আগেও এমন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০১২ সালের শেষ দিকে ইতালিয়ান কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট ইন্টার এনভায়রনমেন্ট ফিন্যান্সের (এসআরএল) সঙ্গে যুক্তি হয়। কথা ছিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নগরীর বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রকল্পে সরবরাহ করবে এবং জমি দেবে। আর কোম্পানিটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এজন্য ডিএসসিসি মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল্ডের ভেতরে ৩০ একর জমি চাওয়া হয়। কিন্তু কর্পোরেশন এ পরিমাণ জমি দিতে অনীহা প্রকাশ করে। তারা সর্বোচ্চ ৮ একর জমি দিতে সম্মতি দেয়, যা ছিল প্রকল্প বাস্তবায়নে অপ্রতুল। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় প্রকল্পটি আর অগ্রসর হয়নি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাতিলের আদেশও হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য সহকারী প্রকৌশলী আ হ ম আব্দুল্লা হারুন বলেন, ‘বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সংস্থাটির জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে । এই প্রকল্প বাস্তবায়ণ করা হলে পরিবেশ দূষণ হবে না। বরং এই বর্জ্য থেকে পাওয়া যাবে বিদ্যুৎ। এর আনুষঙ্গিক কাজগুলো ২০১৭ সালের জুন নাগাদ শেষ করা সম্ভব হবে।’ আর পাইলট প্রকল্পের মূল কাজ সেপ্টেম্বরে শুরু করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের ব্যয় বাংলাদেশ না বিদেশি প্রতিষ্ঠান করবে তা নির্ধারণ করবে এলজিইডি মন্ত্রণালয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘জাপান, মালয়েশিয়ায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন করা হয়। এই বর্জ্য একটি সম্পদ। এই সম্পদকে তারা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে বিদেশি অনেক বিশেষজ্ঞ এসেছেন। দেনদরবার চলছে। ২০১৭ সালের মধ্যেই এই কাজ শুরু করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে কোম্পানির সঙ্গে সংস্থার মেয়রের এরই মধ্যে দুবার বৈঠক হয়েছে। মেয়র কিছু কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী বৈঠকে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment