‘আল হাজ্জু আরাফাহ’ অর্থাৎ হজ হলো আরাফাহ। ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে অবস্থানই হলো হজের প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। এ কাজের কোনো কাজা ও কাফফারাও হয় না। এ কারণে এটি পালন না করলে হজ আদায় হবে না।
৯ জিলহজ মিনা থেকে ফজর নামাজ আদায় করে সম্ভব হলে গোসল করে অথবা ওজু করে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরস্থিরভাবে তালবিয়া পাঠ করতে করতে আরাফার দিকে রওয়ানা হওয়া।
জাবালে রহমত থেকে শুরু করে মসজিদে নামিরাসহ আরাফার ময়দানের চিহ্নিত সীমানার মধ্যে যে কোনো সুবিধামত স্থানে অবস্থান গ্রহণ করা।
আরাফার ময়দানে অবস্থানের কারণ
ওকুফে আরাফা বা আরাফার ময়দানে অবস্থানের প্রধান কারণ হলো, বান্দাকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া যে, সৃষ্টির সূচনায় এই উপত্যকায় প্রথম ‘আহদে আলাস্তু’র শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সেদিন আল্লাহ তাআলা আদমের পিঠ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত আগত সব বনি আদমকে পিপীলিকার অবয়বে সৃষ্টি করে তাদের জিজ্ঞাসা করেন- ‘আলাসতু বিরাব্বিকুম অর্থাৎ আমি কি তোমাদের প্রভু নই?’
জওয়াবে সেদিন আমরা সবাই (পিপীলিকার অবয়বে সব সৃষ্টি) বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ’।’ (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
কুরআনে পাকে আল্লাহ তাআলা এ কথা সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন, ‘স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তান-সন্তুতি বাহির করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ তারা বলে, ‘নিশ্চয়ই; আমরা স্বাক্ষী রইলাম। (এ স্বীকৃতি গ্রহণ) এ জন্য যে, তোমরা যেন কেয়ামতের দিন না বল, আমরা তো এ বিষয়ে জানতাম না।
কিংবা তোমরা যেন না বল, ‘আমাদের পূর্বপুরুষগণই তো আমাদের পূর্বে অংশী স্থাপন করেছে। আর আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর। তবে কি মিথ্যাবাদীদের কৃতকর্মের জন্য তুমি তাদেরকে ধ্বংস করবে?’
আর এভাবে আমি নিদর্শনসমূহ বিবৃত করে রাখি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৭২-১৭৪)
সে দিনের সেই তাওহিদের স্বীকৃতি ও বিশ্ব মানব সম্মেলনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যই আরাফাতের ময়দানের মুসলিম উম্মাহর মহাসম্মিলনকে হজের প্রধান অনুষ্ঠান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
যেখানে মুসলিম উম্মাহর মহাসম্মিলনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মুমিন-মুসলমান একত্রিত হয় এবং আল্লাহর ইবাদতে, তাওবা-ইসতেগফারে, তাসবিহ-তাহলিল ও তাকবিরে নিয়োজিত হয়।
তাইতো মুসলিম উম্মাহ আরাফাতের ময়দানে সুবিধা মতো স্থানে জোহর হতে মাগরিব পর্যন্ত অবস্থান করবেন। আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে সূর্য ঢলার পরে ইমামের দেয়া হজের সুন্নাতি খুতবা গুরুত্বসহকারে শুনা।
অতঃপর জোহর ও আসর নামাজ এক আজান ও আলাদা আলাদা ইকামতে মূল জামাআতের সঙ্গে কসর আদায় করা। সম্ভব না হলে নিজ নিজ জায়গায় নিজ জামাআতের সঙ্গে তা আদায় করে নেবে।
বিশেষ করে
আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে হৃদয় দিয়ে সে ইতিহাস স্মরণ করা বা স্মৃতিচারণ করা জরুরি যে, ‘এ ময়দানেই একদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের থেকে তাকে প্রভু হিসেবে মেনে নেয়ার স্বীকৃতি গ্রহণ করেছিলেন। আর আমরা তাকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করেছিলাম।
সুতরাং আজকের এ দিনে আমরা প্রভুর গোলাম হতে চাই। শয়তানের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে এসে জীবনের সার্বিক দায়িত্ব-কর্তব্য সব কিছুই প্রভুর কাছে ন্যস্ত করতে চাই।
এ দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান কালে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে তার তাসবিহ-তাহলিল, তাকবির ও দোয়া-দরূদের মাধ্যমে নিয়োজিত থাকা।
কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে কায়মনোচিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন।
কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করে থাকেন এবং তার নিকটবর্তী হন ও ফেরেশতাদের কাছে গৌর্ব করে বলেন, দেখ ওরা কি চায়? (মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তিনি নিম্ন আকাশে নেমে আসেন ও ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা সাক্ষী থাক আমি ওদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।’ মুসনাদে বাযযার, তাবারানি, তারগিব)
তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো আরাফার দোয়া। তাই আল্লাহ তাআলার সেই ঐতিহাসিক স্বীকৃতির কথা স্মরণ করে তার কাছে দোয়া-দরূদ ও ইসতেগফারে নিয়োজিত থাকা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নায় ঘোষিত নির্দেশনা মোতাবেক আরাফার দিনে দোয়া-দরূদ ও তাওবা-ইসতেগফার করার তাওফিক দান করুন। হজে মাবরুর দান করুন। আমিন।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment