ছবিঃ উদ্ভাবক ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন। |
জলযানের সামনে ও পেছনের অংশে লাগানো থাকবে কম্পন সৃষ্টিকারী দুটি ডিভাইস। পানি নিরোধক কৃত্রিম বিদ্যুৎকোষ দিয়ে চলবে ডিভাইসগুলো। ডুবে যাওয়া জলযান থেকে ডিভাইসগুলো কম্পন সৃষ্টি করতে থাকবে পরবর্তী সাতদিন পর্যন্ত। এর মধ্যে উদ্ধারকর্মীরা পানির উপরিভাগ থেকে হাইড্রোসোনার মেশিনের সাহায্যে ভাইব্রেটর থেকে সৃষ্ট কম্পনকে শনাক্ত করে জলযানের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারবে। এ ডিভাইসটি নদীর মোহনা কিংবা যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশেও কাজ করতে সক্ষম।
ডিভাইসটির উদ্ভাবক কৃষিবিজ্ঞানী ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন এর নাম দিয়েছেন ‘লোকেশন ডিটেক্টর’। ‘লোকেশন ডিটেক্টরের’ আরেকটি ধরন রয়েছে, যা স্বল্প-গভীর জলে ডুবে যাওয়া জলযানের অবস্থান শনাক্ত ও জলযানে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারবে বলে জানান উদ্ভাবক ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন।
ভেসে থাকার উপযোগী অ্যালুমিনিয়াম ও কর্ক দিয়ে তৈরি ডিভাইসটি লাগানো থাকবে যানের মাস্তুলে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে ৬০-৭০ ফুট দীর্ঘ তামার তার। ডিভাইসটিতে বার্তা গ্রহণ ও প্রেরণে সক্ষম ইলেকট্রিক চিফ বসানো থাকবে। জলযানটি ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘লোকেশন ডিটেক্টর’ ডিভাইসটি ভেসে উঠবে। আর তৎক্ষণাৎ ডিভাইসটি শব্দসহ সিগনাল দিতে থাকবে। আশপাশে অবস্থানকারী কোনো যান সেটা দেখে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসতে সক্ষম হবে। এছাড়া ‘লোকেশন ডিটেক্টরে’ যেকোনো মোবাইল অপারেটরের চিপ লাগানো থাকবে যা ভেসে থাকা জলযানকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেবে, যানের অবস্থান নির্ণয় ও যানকে মুখোমুখি সংঘর্ষের হাত থেকে রক্ষা করবে। পুরো ডিভাইসটি ব্যাটারির সাহায্যে চলবে। কোনো কারণে ব্যাটারি অচল হয়ে গেলে সিগনাল প্রেরণের জন্য ক্ষুদ্র সোলার প্যানেল লাগানো থাকবে। এছাড়া সিগনালে ব্যবহৃত লাইট বিকল হলেও দূর থেকে শনাক্ত করার জন্য ডিভাইসটি রেডিয়ামে মোড়ানো থাকবে। ‘লোকেশন ডিটেক্টর’ ডিভাইসের সঙ্গে অতি গুরুত্বপূর্ণ লোড ডিটেক্টর নামে আরেকটি ডিভাইস যুক্ত থাকবে- যা জলযানের এক পাশের বাইরের অংশে লাগানো থাকবে। ডিভাইসটি জলযানে প্রবেশের পথে বড় মনিটরের সঙ্গে ক্যাবল দিয়ে যুক্ত থাকবে। ডিভাইসটি যাত্রীদের যানের পানির উচ্চতা ও যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সম্পর্কে সিগনাল দেবে। যাত্রীরা মনিটর থেকেই এসব তথ্য জানতে পারবে। সবুজ, হলুদ ও লাল বাতির সিগনাল দেখে যাত্রীরা জলযানে আরোহণের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।
প্রযুক্তিটির উদ্ভাবক ইয়ামিন বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রচলিত পদ্ধতিতে ডুবে যাওয়া জলযানের অবস্থান জানা যায় না। কিন্তু এ যন্ত্রটির মাধ্যমে সহজে অল্প সময়ে, ঘোলা বা লবণাক্ত পানির যেকোনো গভীরতা থেকে জলযানের অবস্থান নির্ণয় করা যাবে। প্রযুক্তিটি প্রতিটি জলযানে স্থাপন করা হলে নদী বা সমুদ্র পথে চলাচলকারী লঞ্চ বা জাহাজ ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। আবার ডুবে গেলেও তা সহজে উদ্ধার করা যাবে। প্রযুক্তিটি আমাদের দেশের জন্য সহজলভ্য করেই তৈরি করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিওটিএ) পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ডিভাইসটি কাজে লাগানো সম্ভব বলে জানান উদ্ভাবক ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন।
No comments:
Post a Comment