জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহায়তায় বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় সোনালী ডিমের মুরগী ‘স্বর্ণা’ উদ্ভাবন করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রায় পাঁচ বছর গবেষণার পর মাঠ পর্যায়ে সফলনা শেষে ‘স্বর্ণা’ উদ্ভাবন করা হলো।
এক দিন বয়সেই এ মুরগীর পালকের রঙ দেখে মোরগ বা মুরগী সনাক্ত করা যায়। এছাড়াও একদিন বয়সে মোরগ বাচ্চার পালকের রঙ সাদা এবং বাচ্চা মুরগীর পালকের রঙ হালকা বাদামী বর্ণের হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুরগীর পালকের রঙ গাঢ় বাদামী বা সোনালী বর্ণ ধারণ করতে থাকে।
লাল ঝুটি ও সোনালী পালক বিশিষ্ট উদ্ভাবিত এই নতুন প্রজাতির মুরগীকে ‘বিএলআরআই লেয়ার স্ট্রেইন-২’ বা ‘স্বর্ণা’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। যা অন্যান্য হাইব্রিড মুরগীর মতই ২০ সপ্তাহ বয়সে ডিম দেয়া শুরু করে এবং একটানা ৮০ সপ্তাহ পর্যন্ত ডিম দেয়। ইতিমধ্যে গবেষণা খামার পর্যায়ে স্ট্রেইনটি লালন-পালন করে এর উৎপাদন দক্ষতা যাচাই করে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে।
বিএলআরআই সূত্র জানায়, গত ১১ ডিসেম্বব বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার হিজলারপুল গ্রামে মো. খলিল সিকদারের খামারে প্রত্যায়নকারী গবেষণা কমিটির সদস্য, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, গবেষক, উদ্যোক্তা খামারী, খামারী এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পোল্ট্রি বিজ্ঞানীদের নিয়ে দিনব্যাপী মাঠ দিবসে স্বর্ণা মুরগীর উদ্ভাবনী বিষয়গুলো নিয়ে অবহিত করা হয়।
মাঠ দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড.মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে পোল্ট্রি ব্রিডিং নিয়ে কাজ করছে বিএলআরআই। এর মধ্যে অনেকটা সাদা রঙয়ের শুভ্রা জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।’
তিনি জানান, বাজারে বাদামী রঙয়ের ডিমের চাহিদা বেশী থাকায় ২০০৯ সালে ব্রাউন কালার ডেভলপ নিয়ে কাজ শুরু করেন তারা। গবেষণা খামার পর্যায়ে সফলতার চেয়েও বরিশাল, টাংগাইল এবং জামালপুরে খামার পর্যায়ে স্বর্ণার উংপাদনশীলতা আরও বেশী আশাব্যঞ্জক।
এ সময় তিনি স্বর্ণার ব্যাপক সম্প্রসারণের জন্য প্রত্যায়নকারী কমিটির সুপারিশ এবং উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের সুচিন্তিত মতামত দাবি করলে তারা সবাই স্বর্ণার স্বপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গৌতম কুমার কুণ্ডু খামারীদের নতুন কিছু করতে না চাওয়ার মানসিকতা পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে ‘স্বর্ণা’ মুরগীর ভালো ফলাফল পাওয়া গেলে গবেষণা সার্থক হবে।’
এ প্রযুক্তিটি হস্তান্তর হলে তা ছড়িয়ে দিতে প্রাণিসম্পদ বিভাগ প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।
গৌতম কুমার কুণ্ডু আরও জানান, খামারী খলিল সিকদারের খামারে ১৩ সপ্তাহ বয়সের এই ‘স্বর্ণা’ মুরগীগুলোর উৎপাদনশীলতা যাচাই করতে দেয়া হয়। ১৮ সপ্তাহ বয়স থেকেই কিছু কিছু মুরগী ডিম দিতে শুরু করে। ২০ সপ্তাহ বয়স থেকে সবগুলি মুরগীই ডিম দেয়। মুরগীগুলির বয়স এখন ২৮ সপ্তাহ।
তিনি জানান, হিজলারপুল গ্রামের এই খামারী গত ৫-৬ বছর যাবত বিএলআরআই এর শুভ্রা জাতের (বিএলআরআই লেয়ার স্ট্রেইন-১) মুরগী পালন করছেন। লাল ঝুঁটির সাদা রঙয়ের সুন্দর সেই মুরগী থেকেও লাভবান হচ্ছেন তিনি। দেশীয় স্বাদ আর বড় বড় ডিম পেয়ে খুশী ক্রেতারাও। হিজলারপুল বাজারে নতুন জাত শুভ্রা আর ‘স্বর্ণা’ মুরগীর প্রায় ৮শ’ ডিম প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ব্রিডিং কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে জাতটি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে বিদেশি ডিমের ওপর নির্ভরতা কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী হবে-এমন প্রত্যাশা মাঠ দিবসে আগত সবার।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
সর্ণ মুরগির বাচ্চা কোথায় পাবো
ReplyDelete