আজ পহেলা ডিসেম্বর। বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের মাসের প্রথম দিন। ১৯৭১ সালের এ মাসেই বাঙালি জাতির জীবনে বয়ে আসে মহান এক অর্জনের আনন্দ। সেই আনন্দ স্বাধীন হওয়ার। সেই আনন্দ বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের রক্তস্নাত স্বাধীন পতাকা পত পত করে উড়ার।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর শুরু করা হত্যাযজ্ঞ চলে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পাকিস্তানিরা এই সময়ে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে। এ দেশের প্রায় ২ লাখ মা- বোন তাদের কাছে সম্ভ্রম হারান। পাকিস্তানিদের চেয়ে এদেশের সন্তান ঘৃণ্য রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের অসভ্যতা ও অমানুষিক আচরণ বিশ্ব বিবেককেও স্তম্ভিত করে।
ডিসেম্বরের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধ সারাদেশে সর্বাত্মক রূপ নেয়। চলতে থাকে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা হামলা। একে একে মুক্ত হতে থাকে দেশের বিভিন্ন জায়গা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মুক্তিবাহিনীর অপারেশন চলতে থাকায় পাকিস্তানি সৈন্যরা সিলেটের গারা, আলীরগাঁও এবং পিরিজপুর থেকে ব্যারাক গুটিয়ে নেয়। এছাড়াও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় তারা।
এ মাসের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে কোণঠাসা করতে শুরু করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দেশ স্বাধীন করার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালিরা। সেই যুদ্ধের সমাপ্তি আসে ডিসেম্বরে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তসাগর পেরিয়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালীর প্রতিরোধ যুদ্ধ এ মাসেই বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়।
৪ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী যৌথভাবে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে লড়তে শুরু করে। চতুর্দিক থেকে মিত্র বাহিনীর অগ্রগতির খবর পৌঁছাতে থাকে ঢাকায়। লে. নিয়াজী পুলব্যাকের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্ধিরা গান্ধী আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেন। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর নিয়াজী প্রায় ৯৫ হাজার সৈন্য নিয়ে এ দেশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
নিশ্চিত পরাজয় টের পেয়ে ১৪ ডিসেম্বর হানাদারদের এদেশীয় দোসররা নির্বিচারে হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। এই মাস আমাদের শোক আর বেদনারও স্মৃতি বহন করে। তাই ডিসেম্বর শুধু বিজয়ের আনন্দে ভেসে যাওয়ার দিন নয়, এই মাস অনেক বেদনা আর শোকেরও।
মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও তাদের শৌর্যবীর্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১ ডিসেম্বরকে পালন করা হয় ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে।
প্রতি বছরের মতো এবারেও বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হবে বিজয়ের মাসের প্রতিটি বিশেষ দিবস। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এর জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে থাকবে নানা কর্মসূচি।
১৯৭১ সালে ডিসেম্বর মাসটি ছিল ঘর ছেড়ে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া বীরযোদ্ধাদের সদর্পে গৃহে প্রত্যাবর্তনের মাস। তাই ডিসেম্বর আমাদের বাঙালি জাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment