‘জিরো ডিগ্রী’ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বর্তমানের রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে একটু হলেও আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে সিনেমাটি। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় গতকাল ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বলাকা ও স্টার সিনেপ্লেক্সে। প্রথম দিনেই লক্ষ করা গেছে উপচে পড়া ভীড়। হাউসফুল ছিল প্রতিটি শো।
‘জিরো ডিগ্রী’ পরিচালনা করেছেন অনিমেষ আইচ। ছবিটির কেন্দ্রীয় অংশে অভিনয় করেছেনন মাহফুজ, জয়া, রুহি। যারা অনিমেষ আইচের বুমেরাং সিনেমাটি দেখেছেন তাদের আর নতুন করে বলার দরকার নেই তিনি কোন মাপের নির্মাতা।অন্যরকম সিনেমা জিরো ডিগ্রী
সিনেমার কাহিনীটি গড়ে উঠেছে মাহফুজ ও রুহির সুখের সংসার নিয়ে। একমুহূর্ত একজন অপরজনকে ছাড়া থাকতে পারেননা। তাদের একটি ৮ বছরের ছেলে সন্তানও আছে। মাহফুজ পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং রুহি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকুরি করেন। মাঝে মাঝে বিদেশেও যায় সে। কিন্তু শ্রীলংকা থেকে ফিরে এসে আবারও বিদেশ যায় রুহি। যাবার সময় মাহফুজের পা ছুয়ে সালাম করে এবং ছেলেকে বলে যায় ‘বাবা যা বলবে মন দিয়ে শুনবে।’ কিন্তু সে সময় কেউ বুঝতে পারেনি পরিবারের সাথে কি ভয়ংঙ্কর ধরনের প্রতারনা করতে যাচ্ছে রুহি। এরপর সে পরিবারের সঙ্গে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে।
না ফেসবুক, না মেইল , না স্কাইপে কোনকিছুতেই ছিল না রুহি। এরপর হঠাৎ তিনি একদিন জানান তার এক বন্ধুকে বিয়ে করবেন এবং যথাসময়ে তার ডিভোর্স লেটার পৌছে যাবে। প্রচন্ড হতাশা আর ক্ষোভে নেশাগ্রস্থ হযে পড়ে মাহফুজ। সপ্তাহ না ঘুরতেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় তাদের একমাত্র ছেলে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মাহফুজের ঠাঁই হয় হাসপাতালে।অন্যরকম সিনেমা জিরো ডিগ্রী
চলচ্চিত্রের অপর কাহিনীতে আছেন জয়া। জয়ার বাবা অনেক প্রভাবশালী এবং তিনি জয়ার মাকে হত্যা করেন। এরপর নিজে প্রতারিত হয়েছেন প্রেমিকের কাছে। তাকে বিক্রি করা হযেছে পদ্মার পতিতালয়ে। সেখান থেকে হাসপাতালের নার্স। আবারও একই পরিণতি জয়ার। ধর্ষিত হতে হয় তাকে। সিনেমার বিরতি।
বিরতির পর শুরু হয় প্রতিশোধের আগুন। জেমসের ‘প্রেম ও ঘৃণা’ শিরোনামে ‘ভালটাই দেখেছো দেখোনি ঘৃনার পাহাড়’ গানটির মধ্যে দিয়ে শুরু হয় প্রতিশোধের পর্ব।
সুস্থ হয়ে ফেরেন জয়া ও মাহফুজ দুজনই। জয়া আশ্রয় নেন কর্মজীবি মহিলা হোস্টেলে। সেখানে সে খুঁজে পায় তার প্রাক্তন প্রেমিক তার রুমমেটকে নিয়ে প্রেমের নতুন ফাঁদ পেতেছে।
অন্যদিকে মাহফুজ চায় তার স্ত্রী রুহিকে দেশে ফিরিয়ে এনে টুকরো টুকরো করতে। রুহিও ফিরে আসেন দেশে। মাহফুজ কি পারবেন রুহিকে হত্যা করতে? আর জয়াও কি পারবে তার অতীতের সকল প্রতিশোধ নিতে? তার রুমমেটকে রক্ষা করতে? এসব জানতে দর্শকদের অপেক্ষা করতে হবে ছবিটি দেখা পর্যন্ত।
অনিমেষ আইচের অনবদ্য গল্প, গল্প বলার কৌশল, নির্মাণশৈলী ‘জিরো ডিগ্রী’কে অনন্য অবস্থানে নিয়ে গেছে। প্রেম ও ঘৃণায় এতটা ক্ষোভ কোনো বাংলা পরিচালক আগে ক্যামেরায় আনতে পারেনি। যতক্ষণ সিনেমা হলে থাকবেন মাহফুজ আহমেদের স্ত্রীর প্রতারণার শোধ নেওয়ার জন্য দর্শকের ভেতরেও ক্রোধ কাজ করবে। দর্শক যেভাবে মাহফুজের প্রতারক স্ত্রীকে শাস্তি দিতে চেয়েছেন পরিচালক ঠিক সেভাবেই গল্প এগিয়েছেন।অন্যরকম সিনেমা জিরো ডিগ্রী
জেমসের গানের কথা আগেই বলেছি। হাবিব আর ন্যান্সির গান ভালো হয়েছে যথেষ্ট। গতানুগতিক সিনেমার মতো নাচ গান নেই এতে। কিন্তু বিনোদন আছে। ক্লাইমেক্স আছে। গল্প আছে। রক্ত আছে। গল্পই ছবিটিকে উতরে দিয়েছে। পরিচালক ঠকাননি দর্শকদের। যারা প্রথম অর্ধেক দেখতে ক্লান্ত তারা শেষার্ধে মজা পাবেন।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment