বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪তম, ২০১৩ সালে ১৬তম এবং ২০১২ সালে ছিল ১৩তম স্থানে।
বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির যে ধারণা সূচক বা সিপিআই-২০১৫ (করাপশন পারসেপশনস ইনডেক্স) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার সকালে ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিবেদন প্রকাশ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দুর্নীতির বিশ্বজনীন ধারণা সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। তবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘২০১৪ এর তুলনায় বাংলাদেশের স্কোর অপরিবর্তিত থাকলেও ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ছয় ধাপ এগিয়েছে, আর নিম্নক্রম অনুযায়ী একধাপ পিছিয়েছে। অর্থাৎ সার্বিক বিবেচনায় এবারও বাংলাদেশের কোনো অগ্রগতি হয়নি।’
টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদন প্রকাশকালে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর অপরিবর্তিত থাকলেও অবস্থান এক ধাপ কমেছে। বাংলাদেশের এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে সংসদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরো কার্যকর করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কিছু দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগ নিলেও তার প্রয়োগ ও চর্চার ঘাটতির ফলে আমাদের অগ্রগতি হয়নি। এ ছাড়াও সরকারের নীতিকাঠামো দুর্নীতি সহায়ক।’
ইফতেখারুজ্জামান জানান, বিশ্বের ১৬৮টি দেশ ও অঞ্চলে ২০১৫ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা মোট সূচকের ১০০ মানদণ্ডের মধ্যে স্কোর ২৫। সূচকে ৪৩ স্কোরকে বৈশ্বিক গড় স্কোর বিবেচনা করা হলেও বাংলাদেশে ২৫ স্কোর দুর্নীতির ব্যাপকতা উদ্বেগজনক বলে প্রতীয়মান হয়। এই স্কোর ২০১৪ সালেও একই ছিল। পুরোনো প্রতিবেদনগুলো থেকে দেখা যায়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৭, তার আগের বছর ছিল ২৬।
তিনি জানান, সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) ১৬৮টি দেশের মধ্যে ১৩৯ নম্বরে। আর উল্টোভাবে হিসাব করলে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশ রয়েছে ১৩তম স্থানে। ২০১৪ সালেও বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৫, আর নিম্নক্রম অনুযায়ী অবস্থান ছিল ১৪, ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী অবস্থান ছিল ১৪৫।
অনুষ্ঠানে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বর্তমানে বাংলাদেশে দুর্নীতি বাড়ছে। সর্বক্ষেত্রে নির্বাহীর হস্তক্ষেপে কোনো প্রতিষ্ঠানই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না।’
তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র জনগণ। এ জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, জার্মানির বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টিআই প্রতিবছর ডিসেম্বরে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের সূচক প্রকাশ করে। কিন্তু এবার এক মাস পর জানুয়ারিতে এই তালিকা প্রকাশ করা হলো।
এবার দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এক নম্বরে আছে সোমালিয়া। আর কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের পরে রয়েছে আফগানিস্তান।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment