জয় দিয়েই ঘরের মাঠে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে বাংলাদেশ। এবারের আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৩ রানে হারিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল।
বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রুপের এই ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্তর ৭৩, জয়রাজ শেখের ৪৬ ও পিনাক ঘোষের ৪৩ রানের সুবাদে ৭ উইকেটে ২৪০ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে লিয়াম স্মিথের সেঞ্চুরির পরও ৮ বল বাকি থাকতে ১৯৭ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ছোট পুঁজি নিয়েও বোলিংয়ের শুরুটা দারুণ হয় বাংলাদেশের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান কাইল ভেরেনেকে বিদায় করেন স্বাগতিক অধিনায়ক মিরাজ। মিরাজের বলে স্লিপে সাইফ হাসানের হাতে ধরা পড়েন ভেরেনে (১)।
শুরুতেই ভেরেনের উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেটে উইয়ান মুল্ডারকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন লিয়াম স্মিথ। তবে মুল্ডারকে (৮) বোল্ড করে ২২ রানের এ জুটি ভাঙেন স্বাগতিক পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
দলীয় ৪৪ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টনি ডি জর্জিকেও (৮) বিদায় করেন সাইফউদ্দিন। অনেকটা দুর্ভাগ্যজনকভাবেই আউট হন প্রোটিয়া অধিনায়ক। সাইফউদ্দিনের ইয়র্কার বল জর্জির প্যাডে লেগে গড়িয়ে গিয়ে অফ স্টাম্পের বেল ফেলে দেয়।
দলীয় ৬০ রানে রিভালদো মুনস্যামিকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন বাংলাদেশের অফ স্পিনার সাঈদ সরকার। মুনস্যামির ব্যাট থেকে আসে ৫ রান।
এরপর পঞ্চম উইকেটে ডায়ান গালিয়েমকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এক প্রান্ত আগলে রাখা স্মিথ। ফিফটিও তুলে নেন স্মিথ। ব্যক্তিগত ৫৬ রানে সাজঘরে ফিরে যেতেন তিনি। কিন্তু সঞ্জিতের বলে স্কয়ার লেগে স্মিথের সহজ একটি ক্যাচ ছাড়েন সাঈদ সরকার। অবশ্য খানিক বাদে সাঈদই গালিয়েমকে (২২) বোল্ড করে ৫২ রানের জুটি ভাঙেন।
জীবন ফিরে পাওয়া স্মিথ নতুন ব্যাটসম্যান সায়ানভালার সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। তবে দলীয় ১৬০ রানে সায়ানভালাকে ফিরিয়ে ৪৮ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ। স্লগ-সুইপ করতে গিয়ে মিডউইকেটে সাইফউদ্দিনের হাতে ধড়া পড়েন সায়ানভালা (১৭)। তবে সেঞ্চুরি তুলে নেন স্মিথ।
অবশ্য সেঞ্চুরি পর আর টিকতে পারেননি। সালেহ আহমেদের বলে মিরাজের দুর্দান্ত এক ক্যাচে বিদায় নেন স্মিথ। ১৪৬ বলে ৯টি চার ও এক ছক্কায় ঠিক ১০০ রানই করেন এই ডানহাতি ওপেনার। একই ওভারে এক বল পরে উইলিয়েম লুডিককেও বিদায় করেন সালেহ আহমেদ। আর তার জোড়া আঘাতে বাংলাদেশও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
শেষ পাঁচ ওভারে জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ৬৩ রান, আর বাংলাদেশের ২ উইকেট। তবে ৮ বল বাকি থাকতেই দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ দুই উইকেট তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের জয়ে তুলির শেষ আঁচড়টা দেন অধিনায়ক মিরাজ। হোয়াইটহেডকে ফিরিয়ে প্রোটিয়াদের ইনিংসের ইতি টেন দেন মিরাজ। অবশ্য হোয়াইটহেডের ক্যাচটা নিয়েছেন ব্যাট হাতে আলো ছোড়ানো শান্তই। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে তার হাতেই।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ছিল সাবধানী। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাইফ হাসান ও পিনাক ঘোষ প্রথম ৩ ওভারই মেডেন খেলেন। প্রথম ৯ ওভারে স্কোরবোর্ডে ২৩ রান জমা করেন দুজন। দশম ওভারে প্রোটিয়া পেসার উইয়ান মুল্ডারের অফ সাইডের বাইরের একটি শর্ট বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে উইকেটের পেছনে কাইল ভেরেনেকে ক্যাচ দেন সাইফ (৬)। ফলে ভেঙে যায় ৩০ রানের উদ্বোধনী জুটি।
সাইফের বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেটে জয়রাজ শেখের সঙ্গে ভালো একটি জুটি গড়ে তোলেন পিনাক। কিন্তু দলীয় ৭৪ রানে পিনাক রান আউটে কাটা পড়লে ভেঙে যায় ৪৪ রানের এ জুটি। ৫১ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৩ রান করেন পিনাক।
জয়রাজ শেখও উইকেটে থিতু হয়ে সাজঘরের ফেরেন। দলীয় ১০৩ রানে হোয়াইটহেডের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন জয়রাজ (৪৬)। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও একটি ছক্কার মার।
এরপর চতুর্থ উইকেটে নাজমুল হাসান শান্ত ও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ভালো একটি জুটি গড়ে তোলেন। দলের স্কোরও দেড়শ পেরিয়ে যায়। কিন্তু মিরাজের বিদায়ে ভেঙে যায় ৫৯ রানের এ জুটি। প্রোটিয়া অধিনায়ক ডি জর্জির বলে লুডিককে ক্যাচ দেওয়ার আগে মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ২৩ রান।
মিরাজের বিদায়ের পর পঞ্চম উইকেটে জাকির হাসানের সঙ্গে ৪৫ রানের আরেকটি ভালো জুটি গড়েন শান্ত। জাকিরের (১৯) বিদায়ে ভাঙে এ জুটি। আর শান্ত ৪৯তম ওভারে আউট হয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত স্বাগতিকদের স্কোরটা আর আড়াই শ’ হয়নি। ইনিংস সর্বোচ্চ ৭৩ রান আসে শান্তর ব্যাট থেকে। তার ৮২ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ৩টি ছক্কার মার।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে মুল্ডার সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ৪২ রানের বিনিময়ে। এ ছাড়া জর্জি, হোয়াইটহেড ও সিপামলার ঝুলিতে জমা পড়ে একটি করে উইকেট।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment