অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, নিশ্চিত এক-দুই ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বেন সাকিব আল হাসান। কেউ কেউ তো বলেই ফেলেছিলেন, ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে হয়তো খেলতে পারবেন না সাকিব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের শেষ ওভারে সাকিবের ‘আচরণ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই। এমনকি, খোদ বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টও সেই শঙ্কায় ছিল, ‘আইসিসি থেকে হয়তো নিষেধাজ্ঞার ঘোষণাই আসতে পারে।’ নিষিদ্ধ হওয়ারন খাঁড়ায় ছিলেন আরও একজন, নুরুল হাসান সোহান। সাইড বেঞ্চে থেকেও সোহান যেভাবে ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, লঙ্কান থিসারা পেরেরার সঙ্গে আঙ্গুল তুলে তর্ক জুড়েছিলেন, তাতে নিশ্চিত ‘লাল কার্ড’ই দেখার কথা ছিল তার।
কিন্তু ভাগ্য ভালোই বলতে হবে সাকিব-সোহানের। মারাত্মক অপরাধ সত্ত্বেও শুধুমাত্র জরিমানা দিয়েই বেঁচে গেলেন তারা দু’জন। ম্যাচ ফি’র ২৫ শতাংশ করে কেটে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড। সঙ্গে উপহার দিয়েছেন একটি করে ডিমেরিট পয়েন্ট। আজ সকালেই শুনানির জন্য ডাকা হয় সাকিব এবং সোহানকে। আইসিসি এলিট ম্যাচ রেফারি প্যানেলের সদস্য ক্রিস ব্রডের সামনে গিয়ে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নেন সাকিব-সোহান। যে কারণে, আর আনুষ্ঠানিকভাবে শুনানির প্রয়োজন হয়নি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের শেষ ওভারে নো বল না দেয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয় উত্তেজনা। টানা দুটি বল কাঁধের ওপর দিয়ে ডেলিভারি দেন বোলার ইসুরু উদানা। দ্বিতীয় বলে রানআউট হন মোস্তাফিজ। যদিও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নো কিংবা ওয়াইডের আবেদন জানান; কিন্তু দুই অনফিল্ড আম্পায়ার নির্বিকার। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তর্ক করে ওঠেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা।
এরই এক পর্যায়ে বাইরে থেকে প্রতিবাদ করে ওঠেন সাকিব আল হাসান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং রুবেল হোসেনকে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে নির্দেশ দেন। তিনি তর্ক জুড়ে দেন চতুর্থ আম্পায়ারের সঙ্গেও। যদিও রিয়াদ এবং রুবেলকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে মাঠেই রাখেন টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন এবং শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহর বীরোচিত পারফরম্যান্সে ম্যাচ জয় করে নেয় বাংলাদেশ। তবুও ধারণা করা হচ্ছিল, অপরাধের কারণে ভারতের বিপক্ষে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারেন সাকিব।
এতবড় শাস্তির খাঁড়া থেকে বেঁচে গেলেন সাকিব-সোহান। ২৫ ভাগ ম্যাচ ফি জরিমানার পাশাপাশি পেলেন একটি করে ডিমেরিট পয়েন্ট। দু’জনেরই এই প্রথম ডিমেরিট পয়েন্ট এটি। যদিও ক্রিকেটে লাল কার্ডের নিয়ম প্রবর্তন করার পরও সোহান সেটা দেখা থেকে বেঁচে গেলেন। ম্যাচে লঙ্কান আম্পায়ারদের মাথায় সম্ভবত বিষয়টি ছিলো না। যে কারণে, লাল কার্ডের মত অপরাধ করেও শেষ মুহূর্তে বেঁচে গেলেন তিনি। বাঁচলেন নিষেধাজ্ঞার কবল থেকেও।
ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, ‘শুক্রবার যে ঘটনা ঘটেছে এটা ছিল খুবই হতাশাজনক। এ ধরনের ক্রিকেটারের কাছ ক্রিকেটের কোনো পর্যায়েই এমন আচরণ কেউ প্রত্যাশা করতে পারে না। আমি বুঝতে পেরেছি, ম্যাচটার একেবারে শেষ পর্যায় ছিল সেটা। জয়-পরাজয়ের অবস্থা ছিল। যার ওপর নির্ভর করছিল ফাইনালে ওঠার বিষয়টিও। তবুও, ওই দুই (সাকিব-সোহান) ক্রিকেটারের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা যা করতে চেয়েছে, সবই সবার চোখে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে। যদি চতুর্থ আম্পায়ার সাকিবকে না থামাতেন এবং অনফিল্ড আম্পায়াররা সোহান ও পেরেরার মধ্যে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতেন, তাহলে বড় ঘটনাও ঘটে যেতে পারতো।’
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment