ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা তারেকুজ্জামানকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ সময় তাকে হুমকিও দেয়া হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তারেকুজ্জামান বুধবার দুপুরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনের পুকুর পাড়ে এ লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটে। তারিকুজ্জামান ভাঙ্গা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তবে পাশাপাশি তিনি সদরপুরের খাদ্য কর্মকর্তার চলতি দায়িত্বে রয়েছেন।
অপরদিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এ বছর সদরপুর উপজেলায় মোট ৩শ ৪৯ মেট্রিক টন চাল সরকারিভাবে ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) ৭৮ টন চাল কেনার মধ্যে দিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। ওই সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূরবী গোলদার সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
খাদ্য কর্মকর্তা তারেকুজ্জামান বলেন, ‘গত ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি চাল ক্রয় শুরু হয়েছে এই উপজেলায়। তখন উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে বলেন, তার কাছে না শুনে যেন কাউকে বিল না দেই। মঙ্গলবার আমি সদরপুর অফিসে গিয়ে তাকে ফোন দেই যে, স্যার এই বিলগুলো দিতে সরকারিভাবে সময় নির্ধারণ করা আছে, আপনি কি যেন বলতে চেয়েছিলেন এই ব্যাপারে। তখন তিনি আমাকে তার বাড়ির পুকুর পাড়ে যেতে বলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি, ফুডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কয়েকজন মিল মালিক তার বাড়ির পুকুর পাড়ে গেলে তিনি নানা কথার এক পর্যায়ে আমার কাছে ৭ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। মিল মালিকদের কাছ থেকে এই টাকা উঠিয়ে তাকে দিতে বলেন। আমি তখন এর বিরোধিতা করে বলি, আমি সরকারি কর্মকর্তা, আমি তো স্যার ঘুষ লেনদেনের ভিতর থাকতে পারব না। মিল মালিকরা আছে, আপনি সরাসরি কথা বলে নিন।
এ সময় তিনি, সকল বিল বন্ধ রাখার কথা বলেন। তখন আমি তাকে বলি, আপনি ক্রয় কমিটির কেউ নন। এই সিদ্ধান্ত উপজেলা ক্রয় কমিটি ও জেলা ক্রয় কমিটি নিয়ে থাকে। জেলা ক্রয় কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। আমি স্যারকে জানাবো আপনার কথা, সে নির্দেশ দিলে আমি বন্ধ রাখবো। এই কথা বলার পরে তিনি আমার শার্টের কলার ধরে টান দিয়ে ফেল দেন। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় তিনি আমাকে শাসিয়ে বলেন, সদরপুরে চাকরি করতে হলে আমার কথায় উঠতে হবে বসতে হবে।’
তবে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সদরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান বলেন, তিনি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেননি। তিনি (খাদ্য কর্মকর্তা) নিম্নমানের চাল কিনতে চেয়েছিলেন। তখন আমি বলেছি, নিম্নমানের চাল কেনা যাবে না ফ্রেশ চাল কিনতে হবে। আমার এ কথা শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিতে হয়, তার পক্ষে ফ্রেশ চাল কেনা সম্ভব না। প্রয়োজনে যে চাল কেনা হয়েছে তা ফেরত দিয়ে দেবেন। তখন আমি বলেছি সরকারি গুদামে কেনা চাল আপনি ফেরত দিতে পারেন না। এতটুকুই কথা হয়েছে তার সাথে। এর পরে তাকে নিয়ে তার এ বিষয়টি জানাতে ইউএনওর কাছে যাই।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমি এই ঘটনায় ওই কর্মকর্তার নিকট থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment