রাস্তায় লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন একজন অন্ধ ভিক্ষুক। হঠাৎ নাচতে নাচতে এসে তার ভিক্ষার থালা থেকে পয়সা তুলে পালালেন বলিউড তারকা আমির খান। এটি ‘পিকে’ ছবির সেকেন্ড পাঁচেকের দৃশ্য। আর এ দৃশ্যই পাল্টে দিয়েছেন ভারতীয় এক ভিক্ষুকের জীবন।
দিল্লীর যন্তরমন্তরের সামনে ভিক্ষা করে দিন কাটে তেজপুরের জাহাজঘাটে জন্ম নেয়া মনোজ রায়ের। বয়স যখন চার দিন, তখন মারা যান মা। বাবা মুটের কাজ করতেন। হঠাৎ একদিন তিনিও অসুস্থ হয়ে বিছানায় স্থায়ী আবাস গড়েন। তাই পঞ্চম শ্রেণী পাশ দেয়র সঙ্গে সঙ্গেই চাকরির খোঁজ করতে শুরু করেন মনোজ। কিন্তু চাকরি মেলেনি তার ভাগ্যে। অবশেষে ভাগ্যের চাকা ঘুড়াতে পাড়ি দেন দিল্লী। মূক-বধির-অন্ধ সেজে যন্তরমন্তরের সামনে ভিক্ষার বাটি নিয়ে বসে পড়েন। দিনে শ’চারেক টাকা পান। যা দিয়ে কোনো ভাবে দিন চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু হঠাৎ একদিন সব বদলে যায়। মনোজের ভাষায়, ‘সে দিন বিকেলে দু’জন লোক আমার কাছে এসে জানতে চান অভিনয় করতে পারে কি না। আমি উত্তর দেই অভিনয় করেই ভাত জোগাড় করছি। লোকগুলো তখন আমাকে একটা মোবাইল নম্বর আর কিছুটাকা দিয়ে চলে যায়।’
পরের দিন নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করেন মনোজ। তারপর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে তার জীবন। একদিন দামি গাড়ি নিয়ে যন্তরমন্তরের সামনে হাজির হয় শ্যুটিং ইউনিটের কিছু লোক। যা দেখে মনোজের আশপাশের ভিক্ষুকরা চোখ কপালে তোলে। সেখান থেকে নেহরু স্টেডিয়ামে ‘অডিশন’ দিতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। যদিও সেখানে তখন মনোজের মতো বেশ কয়েকজন অন্ধ ভিক্ষুক অপেক্ষা করছিল। টানা কয়েকদিন স্টেডিয়ামে যেতে হয় তাকে।
তেমনই এক দিনের কথা বলতে গিয়ে হেসে ফেলেন মনোজ। তিনি বলেন, ‘খাওয়া দাওয়ার পর এক দিন খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছিল। একটা অল্পবয়সি ছেলের কাছে গিয়ে সে কথা বললাম। ও পকেট থেকে সিগারেট বের করে দিল।’ সেটা হাতে নিয়ে ফেরার সময় কয়েক জন নিরাপত্তাকর্মী তাঁকে ঘিরে ধরে বললো ,‘তোর এত বড় সাহস আমির খানের ছেলের কাছে সিগারেট চাস!’
সে দিনই মনোজ জানতে পারেন আমির খানের কোনো ছবিতে তাকে দিয়ে অভিনয় করানো হবে। এভাবেই একদিন অডিশন শেষে জানতে পারেন তা মনে ধরেছে পরিচালকের। তার পরের গল্প একেবারেই যেন রূপকথা।
এ সম্পর্কে মনোজ বলেন, ‘সেদিন থেকে আমাকে একটা পাঁচতারা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তেজপুরে ব্রহ্মপুত্রে সাঁতার শিখেছি। দিল্লীতে স্নান করার জায়গাই জুটত না। কিন্তু হোটেলে বাথটাব আর সুইমিং পুলে আরামে স্নান করতাম। কয়েকদিনের মধ্যেই আমির খান, সুশান্ত সিংহ রাজপুত, অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে আমার পরিচয়ও ঘটে গেল।’
শ্যুটিং পারিশ্রমিক হাতে পেয়েই মুম্বাইয়ের ট্রেনে চেপে বসেন মনোজ। ‘মায়ানগরী’ ঘুরতে গিয়ে নিমেষে পকেট ফাঁকা করে ফেলেন। আবারো গুয়াহাটিতেফিরে আসেন । আমিরের সঙ্গে ছবিতে কাজ করার পর কি আর ভিক্ষার থালা নিয়ে রাস্তায় বসা যায়? সে কথা ভেবে বেদেতির একটি দোকানে কাজ নিয়েছেন মনোজ।
অন্যদিকে ‘পিকে’র বিজ্ঞাপন টিভিতে দেখানোর পর রাতারাতি ‘হিরো’ হয়ে যান তিনি। লোকজন তাকে ‘পিকে হানি সিংহে’ নামে ডাকা শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেখানে প্রেমের প্রস্তাবও মিলেছে। এ সর্ম্পকে মনোজ বলেন, ‘বড়দিনে প্রথমবারের মতো প্রেমিকার মুখোমুখি হব। সবই হয়েছে আমিরের দয়ায়।’
‘পিকে’ ছবিতে অভিনয় করার পর থেকেই নতুন কোনো ছবিতে অভিনয় করার চিন্তায় আছেন মনোজ। অনেকে আবার তার সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে যোগাযোগও করছেন।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment