চুরি-ছিনতাই হওয়া নামি-দামি ব্র্যান্ডের মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলো পাচার হচ্ছে দুই দেশে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চুরি যাওয়া সেটগুলো কিনে বিক্রি করছে ভারত ও মালয়েশিয়ায়। আর কিছু সেট বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলো ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে রাজধানীর একটি সিন্ডিকেটই। এই সিন্ডিকেট দামি সেটগুলো ভারত ও মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাঙালিদের মাধ্যমে সেদেশে বিক্রি করছে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেটের আরো দু’টি সিন্ডিকেটও এ কাজে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, নিত্য নতুন ব্র্যান্ডের মোবাইল হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে হ্যান্ডসেট চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়েছে।
ব্যবহারকারীদের হ্যান্ডসেট উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সংস্থার একটি স্বতন্ত্র টিম কাজ করছে।
ছিনতাইয়ের এসব সেট অল্প টাকায় কিনে পরবর্তীতে পুলিশের কাছে আটক হয়ে আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছে সেকেন্ড হ্যান্ড (পুরানো) সেটের অনেক ক্রেতাকে।
গোয়েন্দা সংস্থার একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে চোরাই মোবাইল সেটগুলো বিক্রি করতে কিছুটা সমস্যায় পড়েছে ছিনতাইকারীরা। এজন্য কৌশল পাল্টে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করছে হ্যান্ডসেট।
ছিনতাইকারীদের কৌশলের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের চোরা চালান প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার নাজমুন নাহার।
সংবাদ প্রতিদিন২৪ অনলাইন ডটকমকে তিনি বলেন, পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পেতে ছিনতাইয়ের পর এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা হয়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবরের একটিসহ সারাদেশে তিনটি চক্র এসব মোবাইল ফোন পাচারের কাজ করে আসছে বলে জানান তিনি।
বছরজুড়ে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফাইয়ার (আইএমইআই) নম্বর দিয়ে ছিনতাই হওয়া শতাধিক হ্যান্ডসেট উদ্ধার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ক্রেতাদের মালিকানা দেখে সেগুলো ফিরিয়ে দেয়ার নজিরও তৈরি করেছিল তারা। তবে গত কয়েক মাসে সেট উদ্ধারের সংখ্যা নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়।
ফোনের মালিকের অভিযোগ পেয়ে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে পুলিশ জানায়, গত কয়েক মাস ধরে ফোন উদ্ধার করা যাচ্ছে না। সিগন্যাল দেখে বোঝা যায়, সেট সীমান্তের কাছাকাছি ভারতের কোন স্থানে। পরবর্তীতে ইন্টেলিজেন্স কালেকশনের পর পাচারের ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দা সংস্থা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পাচারকারীরা চোর কিংবা ছিনতাইকারী নয়, তারা সাধারণ ব্যবসায়ী। ব্যবসার কাজে বিদেশ গিয়ে অথবা দেশে বসেই এ ধরনের কাজ করে তারা। তবে তাদের সঠিক নাম পরিচয় এখনো সংগ্রহ করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ জানায়, মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় বাংলাদেশি শ্রমিকদের হাতে ৪/৫টি হ্যান্ডসেট ধরে দেওয়া হয়। প্রতিটি হ্যান্ডসেট বহনের ‘পারিশ্রমিক’ সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা। পরবর্তীতে শ্রমিকদের নিজ ঠিকানা থেকে চক্রের সদস্যরা সেট সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। মালয়েশিয়ায় এসব চোরাই হ্যান্ডসেটের মূল ক্রেতা বাংলাদেশি শ্রমিক।
এছাড়াও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে ছিনতাই হওয়া হ্যান্ডসেট। বাংলাদেশিদের পাশাপাশি ভারতীয় বাঙালিরাও এসব চক্রের সঙ্গে মিলে পাচারের হ্যান্ডসেটগুলো বাজারজাত করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে সব হ্যান্ডসেট নয়, পাচার করা হয় শুধু অ্যাপলের আইফোন এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের ফোনগুলো। ছিনতাইয়ের গ্যালাক্সি নোট আর ট্যাবও রয়েছে পাচারের তালিকায়।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোন বিজনেসম্যান অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি নিজামউদ্দিন জিটু সংবাদ প্রতিদিন২৪ অনলাইন ডটকমকে বলেন, বাজারে যাতে নতুন আইএমইআই দিয়ে সেট বিক্রি না হয় সেজন্য বিটিআরসি’র মনিটরিং করার কথা। তারা চাইলে চুরি যাওয়া হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর বন্ধ করে দিতে পারে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি’র সচিব সরওয়ার আলম জানান, আইএমইআই নম্বর ধরে সেট উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তারাও সহযোগিতা দিয়ে থাকেন।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment