একাত্তরে হত্যা-গণহত্যার দায়ে আলবদর বাহিনীর অন্যতম শীর্ষনেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই
মূল হোতার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম
উদ্দিনসহ ছয়জনকে হত্যা-গণহত্যার দায় (১১ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত হওয়ায় তাকে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশ বহাল
রেখেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
১১ নম্বর ছাড়াও ১২ নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত দাস
লাতু ও টুন্টু সেন রাজুকে হত্যার দায়েও কাসেমের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন
ট্রাইব্যুনাল। তবে চূড়ান্ত রায়ে প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগ থেকে তাকে
খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
৪, ৬ ও ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে মীর কাসেম আলীকে খালাস দেয়া হয় আর সাজা বহাল রাখা হয় ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগের।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে আদালতে বসেন প্রধান
বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ সময়
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার
মাহবুব হোসেনসহ সিনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতে কাগজের কার্যতালিকায় মামলাটি না
থাকায় আজ রায় হবে না বলে জানান আদালত। এমন ঘোষণার পর আইনজীবীসহ সবাই বেরিয়ে
গেলে তিন থেকে চার মিনিট পরেই আদালত খন্দকার মাহবুব হোসেনকে ডেকে জানান
আজই রায় হবে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে ১১ নম্বর অভিযোগটি
হল, ১৯৭১ সালে ঈদুল ফিতরের পরের যে কোনো একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও
নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে
মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে
২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে
জসিমের মৃত্যু হলে আরো পাঁচজন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী
নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২
নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক
অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই একই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন
মীর কাসেম আলী। দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ১ হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার আবেদনে
১৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চান তিনি।
৮ জনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও মরদেহ গুম এবং
২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতনকেন্দ্রে আটকে রেখে
নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ১৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধকালে
জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা এবং সেইসময়ের
ইসলামী ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক মীর কাসেম আলী। এ ১৪ অভিযোগের মধ্যে
১০টি প্রমাণিত হয়। বাকি ৪টি অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে
পারেনি।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মীর কাসেমের আপিল
মামলাটির শুনানি শুরু হয়। আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচারকক্ষে ৭ কার্যদিবসে এ
মামলার শুনানি ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। এটি আপিলে সপ্তম মামলা যার চূড়ান্ত
শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।
এর আগে ঘোষিত ছয় আপিল মামলার চূড়ান্ত রায়ের
মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ৪ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বাকি দুটির
মধ্যে একটির পূর্ণাঙ্গ ও একটির সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের
১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে মীল কাসেমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের
বিচার।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া
নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment