হিজরি (আরবি) বছরের দ্বিতীয় মাস হলো সফর। এ মাসের উল্লেখযোগ্য বিশেষ কোনো মর্যাদা বা ফজিলত সম্পর্কিত বর্ণনা নিই। কিন্তু মুমিন বান্দার ইবাদাতের জন্য আল্লাহর সৃষ্টি প্রতিটি দিন-রাত-মাস-বছরই গুরুত্বপূর্ণ। সে হিসেবে সফর মাসও এর বাইরে নয়।
আল্লাহ তাআলার রহমত, বরকত, কল্যাণ লাভ করতে হলে প্রতিটি দিন এবং রাতেই বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ, ওয়াজিব এবং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত, মুস্তাহাব ও নফল আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি গভীর রজনীতে নফল ইবাদাত, তাহাজ্জুদ নামাজ ও জিকির-আজকার করে প্রভুর দরবারে পরকালের সফলতা লাভে রোনাজারি করতে হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস শেষ হওয়ার সুসংবাদ দেবে, আমি তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং সফর মাসের শিগগিরই অবসান কামনা করেছেন। এ কারণে অনেকে এই মাসকে একটি দুঃখের মাস মনে করেন।
তাই এ মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদাত করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতির সমূদয় অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করতে হবে। সফর মাসের হাদিসটির ব্যাপারে ইসলামি চিন্তাবিদগণ দুইটি মত তুলে ধরেছেন-
প্রথম মত
হাদিসটি সম্পূর্ণ জাল, মিথ্যা যা আদৌ রাসুলের হাদিস নয়, রবং যারা এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তাদের কেউই হাদিস সংরক্ষণকারী নয়।
দ্বিতীয় মত
হাদিসটি সহিহ, তবে এ হাদিসের প্রেক্ষাপট কী তা জানতে হবে। মূলত হাদিসটি একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে এ বক্তব্য প্রদান করেছেন।
একবার হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলামের দাওয়াত নিয়ে দূরের এক জনপদে যান। সেখান থেকে ফিরতে তাঁর অনেক বিলম্ব হচ্ছিল। কোনো চিঠি বা সংবাদও আসছে না।
এমতাবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রিয় সাহাবির জন্য চিন্তিত হয়ে পড়লেন। ঐ সময় একটি চিঠি এলো, তাতে লেখা ছিল- ‘হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি সফর মাস শেষে মদিনায় ফিরব। কিন্তু তখনো সফর মাসের বেশ সময় বাকি।
তাই তিনি হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকাকালীন সময় সফর মাস দ্রুত শেষ হওয়ার বিষয়ে কথাগুলো বলছিলেন যে, কখন সফর মাস শেষ হবে। সফর মাস সংশ্লিষ্ট হাদিসটি ঐ সময়ের।
আখেরি চাহার সোম্বা
এ মাসের শেষ বুধবারকে আখেরি চাহার সোম্বা বলা হয়। সাধারণ মুসলমানগণ এ দিনটিকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করে। কিন্তু আখেরি চাহার সোম্বা কী? তা অনেকেই জানে না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর মাসের শেষ দিকে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে যান। সফর মাসের শেষ বুধবার তিনি অনেকটাই সুস্থতা লাভ করেন। এ খুশিতে অনেক সাহাবি বিভিন্নভাবে দান-সাদকা করেছেন। এ দান-সাদকা নিঃসন্দেহে উত্তম কাজ।
আখেরি চাহার সোম্বা পালনের বিষয়ে এমন কোনো হাদিস বা দলিল নেই যে, পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরাম এ দিনটি খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করেছেন বা প্রতি বছর দান-সাদকা করেছেন।
যেহেতু ঐ সময় থেকে শুরু করে পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরামদের যুগে তা ছিল না, সে হিসাবে আখেরি চাহার সোম্বা ঘটা করে পালনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
তবে...
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত আমল ছিল প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল রোজা রাখা। যাকে আইয়ামে বিজের রোজা বলা হয়ে থাকে।
সুতরাং আইয়ামে বিজের রোজা রাখলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। সুতরাং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত আমল আইয়ামে বিজের রোজা রাখা অনেক সাওয়াবের কাজ এবং গুরুত্বপূর্ণ আমল।
পরিশেষে...
সফর মাসকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ইবাদাত নয় বরং আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট সব দিন-রাত-মাসের ইবাদাত-বন্দেগি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ; সেহেতু দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভে এবং উভয় জগতের সকল অপকারিতে ও অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকতে নফল নামাজ, আইয়ামের বিজের রোজা পালন এবং দান-সাদকায় আত্মনিয়োগ করা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নেক আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি অন্যায় কাজ থেকে ফিরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
আল্লাহ তাআলার রহমত, বরকত, কল্যাণ লাভ করতে হলে প্রতিটি দিন এবং রাতেই বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ, ওয়াজিব এবং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত, মুস্তাহাব ও নফল আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি গভীর রজনীতে নফল ইবাদাত, তাহাজ্জুদ নামাজ ও জিকির-আজকার করে প্রভুর দরবারে পরকালের সফলতা লাভে রোনাজারি করতে হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস শেষ হওয়ার সুসংবাদ দেবে, আমি তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং সফর মাসের শিগগিরই অবসান কামনা করেছেন। এ কারণে অনেকে এই মাসকে একটি দুঃখের মাস মনে করেন।
তাই এ মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদাত করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতির সমূদয় অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করতে হবে। সফর মাসের হাদিসটির ব্যাপারে ইসলামি চিন্তাবিদগণ দুইটি মত তুলে ধরেছেন-
প্রথম মত
হাদিসটি সম্পূর্ণ জাল, মিথ্যা যা আদৌ রাসুলের হাদিস নয়, রবং যারা এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তাদের কেউই হাদিস সংরক্ষণকারী নয়।
দ্বিতীয় মত
হাদিসটি সহিহ, তবে এ হাদিসের প্রেক্ষাপট কী তা জানতে হবে। মূলত হাদিসটি একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে এ বক্তব্য প্রদান করেছেন।
একবার হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলামের দাওয়াত নিয়ে দূরের এক জনপদে যান। সেখান থেকে ফিরতে তাঁর অনেক বিলম্ব হচ্ছিল। কোনো চিঠি বা সংবাদও আসছে না।
এমতাবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রিয় সাহাবির জন্য চিন্তিত হয়ে পড়লেন। ঐ সময় একটি চিঠি এলো, তাতে লেখা ছিল- ‘হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি সফর মাস শেষে মদিনায় ফিরব। কিন্তু তখনো সফর মাসের বেশ সময় বাকি।
তাই তিনি হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকাকালীন সময় সফর মাস দ্রুত শেষ হওয়ার বিষয়ে কথাগুলো বলছিলেন যে, কখন সফর মাস শেষ হবে। সফর মাস সংশ্লিষ্ট হাদিসটি ঐ সময়ের।
আখেরি চাহার সোম্বা
এ মাসের শেষ বুধবারকে আখেরি চাহার সোম্বা বলা হয়। সাধারণ মুসলমানগণ এ দিনটিকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করে। কিন্তু আখেরি চাহার সোম্বা কী? তা অনেকেই জানে না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর মাসের শেষ দিকে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে যান। সফর মাসের শেষ বুধবার তিনি অনেকটাই সুস্থতা লাভ করেন। এ খুশিতে অনেক সাহাবি বিভিন্নভাবে দান-সাদকা করেছেন। এ দান-সাদকা নিঃসন্দেহে উত্তম কাজ।
আখেরি চাহার সোম্বা পালনের বিষয়ে এমন কোনো হাদিস বা দলিল নেই যে, পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরাম এ দিনটি খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করেছেন বা প্রতি বছর দান-সাদকা করেছেন।
যেহেতু ঐ সময় থেকে শুরু করে পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরামদের যুগে তা ছিল না, সে হিসাবে আখেরি চাহার সোম্বা ঘটা করে পালনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
তবে...
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত আমল ছিল প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল রোজা রাখা। যাকে আইয়ামে বিজের রোজা বলা হয়ে থাকে।
সুতরাং আইয়ামে বিজের রোজা রাখলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। সুতরাং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত আমল আইয়ামে বিজের রোজা রাখা অনেক সাওয়াবের কাজ এবং গুরুত্বপূর্ণ আমল।
পরিশেষে...
সফর মাসকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ইবাদাত নয় বরং আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট সব দিন-রাত-মাসের ইবাদাত-বন্দেগি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ; সেহেতু দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভে এবং উভয় জগতের সকল অপকারিতে ও অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকতে নফল নামাজ, আইয়ামের বিজের রোজা পালন এবং দান-সাদকায় আত্মনিয়োগ করা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নেক আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি অন্যায় কাজ থেকে ফিরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment