সৌদি ছিনতাইকারীরা বিভিন্ন ফন্দিফিকির করে প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা, মোবাইল ছাড়াও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়। তাদের ছিনতাইয়ের ধরন ও কৌশল সম্পূর্ণ আলাদা। এসব ছিনতাইকারীর টার্গেটে থাকে বিভিন্ন দেশের প্রবাসী।
বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালি তথা দক্ষিণ এশিয়ার নাগরিকদের নিয়ে তারা ছিনতাইয়ের জাল বোনে। সিন্ডিকেট করে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করে। বিশেষ করে প্রবাসীরা তাদের কর্মস্থল থেকে কাজ শেষে ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন। আগে থেকেই তারা ওঁৎ পেতে থাকে, সুযোগ বুঝে ছুরি, রামদা, লাঠি ও রড দিয়ে ভুক্তভোগীদের ওপর হামলা করে সব কিছু ছিনিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রাইভেটকারেও কৌশলে বসে থাকে সৌদি নাগরিকরা। অনেক সময় গাড়ি চালকরাও সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে। যখন কোনো বিদেশি নাগরিক দূরে কোথাও যাওয়ার জন্য তাদের গাড়িতে ওঠে এরপর গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার আগেই ছিনতাইকারীদের কাছে থেমে যায়। যাত্রীদের কাছে থাকা টাকা-পয়সাসহ সবকিছু ছিনিয়ে নেয় তারা।
সৌদি আরবের গাড়িগুলো অটোসুইচে নিয়ন্ত্রিত। এ কারণে ছিনতাইকারীদের অধিকাংশ যাত্রীর বোঝার আগেই সুইচ বন্ধ করে দেয়। গাড়িগুলোতে ছুরিসহ বিভিন্ন অস্ত্র আগে থেকেই লুকিয়ে রাখা হয়।
প্রবাসীদের টাকা-পয়সা, মোবাইল ছিনতাই হলে পুনরায় সেগুলো ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কেননা প্রবাসী মানেই একা, প্রবাসী মানেই বোকা। পরের দেশে বলার মতো লোক থাকে না। পুলিশে অভিযোগ দিয়েও খুব একটা কাজ হয় না। অধিকাংশ শ্রমিক দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বেতন পান ৮০০, ১০০০ রিয়াল। ওখান থেকে তাদের নিজের খাওয়া-দাওয়া শেষে বাড়িতে টাকা পাঠাতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়।
ধারদেনা করে বিদেশ এসেও যদি এমন ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হয় তাহলে আর কিছুই বলার থাকে না। নীরবে নিভৃতে কাঁদতে হয় আমাদের মতো অসহায় প্রবাসীদের।
ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছে এমন কয়েকজন এ প্রতিবেদককে জানায়- কক্সবাজারের আব্দুল হক; থাকেন সৌদি আরবের খামিশ মুশাইতে। নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল সবকিছুই খোয়া যায়। শুধু টাকা-পয়সা নয়, তাকেও অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তার থেকে ফোন নম্বর নিয়ে দেশের বাড়িতে ফোন দিয়ে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করে ছিনতাইকারীরা। পরে পরিবারের লোকজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হলে অপহরণকারীদের কথা মতো দেশটির পুলিশ মুক্তিপণ নিয়ে স্থানীয় একটি পার্কে অপহরণকারীদের গ্রেফতার করে।
কিছুদিন আগের ঘটনা, চট্টগ্রাম প্রবাসী মোহাম্মদ আলী হোসেন থাকেন সৌদি আরব আছির প্রদেশস্থ খামিস মোশাইতে। কাজ করেন একটি প্লাস্টিকের দোকানে। কাজ শেষে শুবয়া থেকে রাত ১১টার দিকে বাসায় ফেরার পথে তাকে একা পেয়ে ছিনতাইকারীরা মোবাইল ফোনসহ টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়।
প্রবাসীদের প্রতি পরামর্শ হলো- রাতে চলাফেরা করার সময় যৌথভাবে চলাফেরা করা উচিত। বিশেষ করে আবাসিক এলাকায় না গিয়ে মেইন রোড দিয়ে চলাফেরা করলে এমনটা হবে না। দূরে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলে ভালো চালক দেখে গাড়িতে ওঠা। রাস্তায় ফোন রিসিভ করে একপাশে দাঁড়িয়ে বা বসে কথা বলা।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment