তেলের বিষাক্ততায় সুন্দরবনের করমজলে মারা যাচ্ছে গুইসাপ ও বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় মাছ আর কাঁকড়া। তেলে আক্রান্ত গাছ ও ঘাস ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। সুন্দরবনের বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে থাকা ফার্নেস অয়েলের প্রভাবে আক্রান্ত হতে পারে হরিণ ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারও। এমন ধারণা করছেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র সুন্দরবনের করমজলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি মৃত গুইসাপ পড়ে আছে। গুইসাপের ছবি তুলতে দেখে সেখানকার কয়েকজন কর্মী ও দর্শনার্থী ছুটে আসেন। আস্তে আস্তে ভিড় বাড়তে থাকে মৃত গুইসাপটি ঘিরে। মানুষের জটলা দেখে এক পর্যায়ে এগিয়ে আসেন প্রজনন কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুর রব।
এ ব্যাপারে তিনি সংবাদ প্রতিদিন২৪ অনলাইন ডটকমকে বলেন, ‘গুইসাপ নদী-খালের পানিতে নেমে মাছসহ অন্য জলজ প্রাণী ধরে খেয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে তেল খেয়ে আক্রান্ত হয়েছে এমন কোনো মাছ কিংবা অন্য প্রাণী খেয়ে তেলের বিষাক্ততায়ও মারা যেতে পারে গুইসাপটি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক করমজল প্রজনন কেন্দ্রের এক স্টাফ সংবাদ প্রতিদিন২৪ অনলাইন ডটকমকে জানান, করমজলের আশপাশের এলাকায় ছোট বড় কয়েকটি গুইসাপ মারা গেছে বলে জেলেদের মাধ্যমে তিনি জেনেছেন। এছাড়া খালের চরে দেখা যাচ্ছে মৃত কাঁকড়া। সুন্দরবনের নদী-খালের চরে এর আগে এভাবে মেটেসাপ, গুইসাপ ও কাঁকড়া মরে পড়ে থাকতে দেখেননি তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নদী ও খালের পাশে থাকা ঘাস কেটে প্রজনন কেন্দ্রের হরিণগুলোকে খাওয়ানো হয়। ঘাসে তেল লেগে যাওয়াতে সেগুলো এখন আর খাওয়ানো যাচ্ছে না। তাই হরিণেরও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রজনন কেন্দ্রের বাইরে উন্মুক্ত যে হরিণ রয়েছে সেগুলোও তেল মিশ্রিত ঘাস খাচ্ছে না। তারপরও হরিণগুলো যদি এই তেল মিশ্রিত ঘাস খেয়ে ফেল তাহলে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হতে পারে। আর সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের খাদ্যের ৮০ ভাগের যোগান হয়ে থাকে হরিণ থেকে। আর তেল মিশ্রিতি পানি ও ঘাস খেয়ে হরিণ আক্রান্ত হলে সেই আক্রান্ত হরিণ চলে যাবে বাঘের পেটে। আর এতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে বাঘ।
সুন্দরবনের পশুর নদীতে মাছ ধরা একাধিক জেলে সংবাদ প্রতিদিন২৪ অনলাইন ডটকমকে জানান, গত কয়েকদিন তেলের কারণে তারা নদীতে মাছ ধরতে পারেনি। আর রবিবার নদীতে জাল ফেলে দেখে মাছের দেখা নেই।
তারা বলেন, ‘তেল আমাদের পেটে লাথি মেরেছে। তেলের কারণেই নদীতে মাছ পাচ্ছি না।’
এদিকে রবিবারও জয়মনি এলাকার বিপুল সংখ্যক লোক নৌকা নিয়ে শ্যালা নদীতে তেল সংগ্রহে ব্যস্ত রয়েছে। ট্যাংকার ডুবির ঘটনার ৫দিন পর ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment