চোরাই গাড়ির রমরমে বাজার এখন ওএলএক্স। কম দামে দ্রত চোরাই গাড়ি বিক্রির জন্য গাড়ি চোররা অনলাইনে ফ্রি বিজ্ঞাপন আর কেনাবেচার এই সাইটটিকেই বেছে নিচ্ছে। আর তাই গোয়েন্দাদের দৃষ্টি এখন ওএলএক্সের দিকে।
গোয়েন্দারা জানান, একটি নির্দিষ্ট গাড়ি টার্গেট করে গাড়ি চোর চক্র। তবে এ চক্রের পছন্দের শীর্ষে এলিয়েন এবং প্রিমিও। কয়েক দিন নজরদারি শেষে হুট করে একদিন সেই গাড়ি চুরি করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। পরে গাড়িটি নতুন করে সাজিয়ে ‘ওএলএক্সে’ বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু হয় চোরাই গাড়ি বিক্রির প্রতিযোগিতা।
প্রথমে গাড়ির চেসিস নম্বরের প্লেটটি আগুনে তাপ দিয়ে গলিয়ে নতুন নম্বর (পান্স) বসানো হয়। তারপর তৈরি করা হয় নামিদামী কোনো এক ব্যাংকের জাল পে-অডার্র। বিআরটিএর কর পরিশোধের রশিদ থেকে শুরু করে মালিকানার কাগজ এমনকি সাক্ষী হিসেবে একজন পুলিশ কর্মকর্তার নামের সিলও ব্যবহার করা হয়।
সবশেষে পরিবর্তন করা হয় গাড়ির রং। এভাবে যখন চুরি করা গাড়িটি বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়, ঠিক তখনই এই চক্র ওএলএক্সে সেই গাড়ির ছবি সম্বলিত বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতার নজর আকৃষ্ট করতে থাকে।
এদিকে ক্রেতারাও গাড়ির মূল্য তুলনামূলক কম দেখে বেশ আকৃষ্ট হন। যোগাযোগ করেন বিজ্ঞাপনে দেয়া নম্বরে। পরে নির্দেশনা অনুযায়ী ক্রেতা গাড়ি দেখতে গেলে তাকে সব কাগজপত্র দেখানো হয়, তবে সবই ভুয়া। সাদারণ ক্রেতাদের বিষয়টি বুঝে ওঠা প্রায় কঠিন। সবকিছু দেখেশুনে ক্রেতা গাড়িটি কিনে নিয়ে চলে যাওয়ার পরে জানতে পারেন গাড়িটি আসলে চুরি করা।
সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আসাবিক এলাকা থেকে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন গাড়ি চুরির ৯ মামলার আসামি কুখ্যাত গাড়িচোর চক্রের হোতা ইকবাল হোসেন। পরে ডিবি পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে গাড়ি চুরি প্রসঙ্গে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তিনি। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইস্টার্ন প্লাজা এবং আজিমপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এই চক্রের অন্য চার সদস্যকে। এরা হলেন- মো. জাবেদ, মুশরেকিন আহম্মেদ রাব্বী, আলী হোসেন এবং মহসিন। তাছাড়া এই চক্রের জিম্মা থেকে একটি এলিয়ন ও একটি প্রিমিও গাড়িও উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ, যার চেসিস নম্বর ইতিমধ্যেই জাল করা হয়েছে। বাকি ছিল শুধু গাড়ির রং পরিবর্তনের কাজ।
গাড়িচোর চক্রের প্রতারণা প্রসঙ্গে গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (দক্ষিণ) ডিসি কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংকের পে-অর্ডারগুলো তারা প্রতারণার মাধ্যমে বিআরটিএতে টাকা জমা দেয়ার কথা বলে সাধারণ জনসাধারণের কাছে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন টেন্ডারের কাজে ও বড় রকমের লেনদেনে নকল পে-অর্ডার ব্যবহার করে প্রতারণা করে থাকে।’
এ সময় তিনি ক্রেতাদের প্রতি অনলাইন থেকে যে কোনো পণ্য কেনার আগে তা যাচাইবাছাই করে নেয়ার পরামর্শও দেন।
এদিকে গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের গাড়ি চুরি, উদ্ধার ও প্রতিরোধ দলের নেতৃত্ব দেয়া অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘অনলাইনে পণ্য কেনা-বেচার সুবিধার কারণে ইদানিং গাড়ি চুরি চক্রের তৎপরতা বেশ বেড়েছে। তাই আমরা এখন থেকে অনলাইন ও দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞাপনগুলোও খতিয়ে দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘আগে দেখা যেত, চোরাই গাড়ির প্রমাণ ডিস্পোজাল (ধ্বংস) করা কঠিন ছিলো। তাই খুব বেশি গাড়ি চুরি হতো না। কিন্তু ইদানিং প্রমাণ নষ্ট করা সহজ হয়ে যাওযায় গাড়ি চুরি বেশি হচ্ছে। আর আমরা পর্যায়ক্রমে আরো তদন্ত করে দেখবো যে এই সব জাল কাগজ তৈরিতে বিআরটিএর কেউ জড়িত আছে কিনা।’
উল্লেখ্য, গ্রেপ্তারকৃত ইকবাল ও রাব্বী ইতোপূর্বে একাধিকবার চোরাই গাড়িসহ ডিবি ও থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পরবর্তী সময়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাইরে এসে আবারও গাড়ি চুরি শুরু করেন।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment