নিজস্ব প্রতিবেদক,ফরিদপুর: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ২০ যাত্রী। আহতদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (০৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১ টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার কৈডুবী এলাকায় সোনারতরী পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা- মেট্রো: ব ১৪৭০৭৪) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেলে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে।
এর আগে বুধবার রাত ৯টায় রাজধানীর গাবতলী থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশে রওয়ানা দেয় বাসটি। হতাহত যাত্রীদের অধিকাংশের বাড়ি বরিশাল ও পটুয়াখালী।
বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অভিযোগ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হোসেন সরকারের আহত যাত্রীদের বরাত দিয়ে জানান, রাজধানী ছাড়ার পর বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন চালক। আমিনবাজার ব্রিজ পার হওয়ার পর বেশ কয়েকটি বাসকে বেপরোয়া গতিতে অতিক্রম করেন তিনি। যাত্রীরা বার বার নিষেধ করলেও শোনেনি।
এরপর ভাঙ্গার কৈডুবী এলাকায় পৌঁছলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই ১৯ যাত্রী মারা যান। ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়ার পর মারা যান ৩ যাত্রী। আর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা ২১ যাত্রীর মধ্যে চিকৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও ৩ জন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১০ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন আকলি আক্তার, আসমা, আমেনা, হেলাল ও শাহিনের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। এছাড়া শফিকুলের বাড়ি (২৫) গোপালগঞ্জের মুকসেদপুর, আবজাল মিয়া (৬৫) ও সূর্য বেগমের (৪০) বাড়ি বরিশাল, রেজাউল (৩৫) মির্জাগঞ্জ ও মনিরুল ইসলাম (৩৫) যশোরের বাসিন্দা। নিহত হাসনা বেগমের (৪৫) ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
আহত ব্যক্তিদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ঘটনাস্থল এলাকার বাসিন্দা লাল মিয়ার ভাষ্য, গভীর রাতে প্রচণ্ড শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বাস ও হতাহত যাত্রীদের দেখতে পান। ঘটনাস্থলে নিহত হন ১৯ জন। আহত হয়েছেন ২২ জন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনার শিকার বাসটির নাম ‘সোনার তরী পরিবহন’। বাসে থাকা যাত্রীদের ভাষ্য, বাসটি গতকাল রাত আটটার দিকে ঢাকার গাবতলী থেকে রওনা দিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া যাচ্ছিল। দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে ভাঙ্গা পৌরসভার কৈডুবি এলাকায় বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। এতে বাসটি সড়কের পাশে থাকা একটি রেইনট্রি গাছের সঙ্গে প্রচণ্ড ধাক্কা খায়। বাসটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়।
ঘটনার পর এলাকার লোকজন ও পার্শ্ববর্তী একটি আনসার ক্যাম্পের সদস্যরা গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে ভাঙ্গা ও ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও যোগ দেন।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত যাত্রী রুবি আক্তার বলেন, গাবতলী থেকে ছাড়ার পর থেকেই বাসটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। যাত্রীরা সতর্ক করলেও চালক শোনেননি।
হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর অঞ্চলের সহকারী সুপার বেলাল হোসেন বলেন, বাসের চালক ঘুমিয়ে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহত রোগীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা হবে। দাফনের জন্য প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোজাম্মেল হোসেনের ভাষ্য, তাঁদের কাছে ২২ জনের লাশ এসেছে। এসব লাশ স্বজনদের কাছে দেওয়া হচ্ছে।
তদন্ত কমিটি গঠিত
মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিআরটিএ ও হাইওয়ে পুলিশের প্রতিনিধি রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. আবু নাছের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
গত রাতের এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুর্ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, চিকিৎসকসহ সংশিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এদিকে এ ঘটানয় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment