‘মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, বরং তারা চেয়েছিল অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্ব।’ এমন দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এর আয়োজন করে।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন নানা ধরনের মুক্তিযোদ্ধা তৈরি করছে। সবই লোক দেখানো। যারা ক্ষমতাসীন আছে, দেশের প্রতি তাদের কোনো মায়া নেয়, দায়িত্ব নেই। এরা কোনো দিন স্বাধীনতা চায়নি, চেয়েছে ক্ষমতা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। জিয়া যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সঠিক কথা লেখায় এ কে খন্দকারকে তার লেখা বই প্রত্যাহার করে নিতে চাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি বলেছেন, আমি সত্য কথা লিখেছি। বই প্রত্যাহার করে না নেওয়ায় তার নামে মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। সত্যি কথা শুধু তিনি নন, তাজউদ্দীন আহমেদের মেয়েও লিখেছেন।’
মুক্তিযুদ্ধের পর তৎকালীন সময়ে দেশ পুনর্গঠনের জন্য যেসব বৈদেশিক সহায়তা এসেছিল, তখনকার সরকার তা নিজেদের লোকের স্বার্থে ব্যবহার করেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
‘মুুক্তিযোদ্ধাদের বলতে হবে, ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কী অবস্থা তারা (আওয়ামী লীগ) করেছে। সদ্যসমাপ্ত যুদ্ধের দেশে অনেক সাহায্য এসেছিল, যা দিয়ে দেশ গড়ে তোলা সম্ভব ছিল। আপনারা তো সেই সাহায্য পাননি। সেই সাহায্য সরকারের নিজের আত্মীয়স্বজন ভোগ করত। বিদেশেও পাচার করত। এই পরিস্থিতি এক সময় এমন অবস্থা হলো যখন আর সামাল দিতে পারল না। দেশে কেন দুর্ভিক্ষ হলো? কত লোক মারা গেলো।’
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাসদের উত্থান বর্ণনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জাসদ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে নানা ধরনের বাহিনী তৈরি করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গণ্ডগোল করল। কত লোক হত্যা করল। দেশের এই দুরবস্থা দেখে সিরাজ শিকদার গর্জে উঠলেন, এর প্রতিবাদ করলেন। তখন এই সিরাজ শিকদারকে ধরার জন্য রক্ষী বাহিনী তৈরি করে তাকে হত্যা করা হলো। তারাই (আওয়ামী লীগ) ওই সময়ে ক্রসফায়ার প্রথম করেছে।’
একাত্তরেরর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচাররের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘আমরা মানবতাবিরোধীদের বিচার চাই। তবে সেটি হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজের ঘরে মুক্তিযোদ্ধার নামে যুদ্ধাপরাধী পালছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। শীর্ষ নেতাদের অনেক আত্মীয়স্বজন আছে, যারা শুধু রাজাকার নয়, অনেক বড় বড় অপরাধ করেছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির বদলে বিভেদ সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে এই সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজুলল হক মিলন, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment