বিট্রিশ শাসনামলে পিছিয়ে পড়া পূর্ববঙ্গের মুসলামানদের দাবির প্রেক্ষিতে বঙ্গভঙ্গ রদের পর ১৯২১ সালের ১লা জুলাই প্রতিষ্ঠা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অক্সোফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার অনুকরণে প্রণয়ন করা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ. সি, টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জি.এইচ ল্যংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, স্যার এ এফ রহমান, পিজে হার্টগ, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, রমেশচন্দ্র মজুমদার, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকসহ খ্যাতিমান শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় উচ্চ শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি অল্পদিনে পরিচিতি পায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে। একাডেমিক এক্সিলেন্সির পাশাপাশি দেশের ক্রান্তিকালেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে দেশসেরা এই বিদ্যাপীঠ।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২০০৭ এর ১/১১ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। সফলও হয়েছে প্রতিটি সংগ্রামে।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় জঙ্গিবাদ। এই জঙ্গিবাদ মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অতীতের মতো এবারও এই সমস্যা মোকাবেলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসে এইবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করা হয়েছে ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও মানবিক চেতনা বিকাশে উচ্চশিক্ষা’।
তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি দেখতে দেখতে পার করেছে ৯৫ বছর। আজ ৯৬ বছরের পদার্পন করছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদ রয়েছে ১৩টি, বিভাগ ৮১টি, ইনস্টিটিউট ১১টি, আবাসিক হল ১৯টি, হোস্টেল ৫টি, শিক্ষক ১ হাজার ৯৫৫ জন, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১ হাজার ৯৫৫ জন।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ আজ শুক্রবার দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সকাল সোয়া ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মলে জাতীয় পতাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো এবং উদ্বোধনী সংগীতের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচী শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দিনব্যাপী কর্মসূচীর উদ্বোধন করবেন। এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন হল থেকে শোভাযাত্রাসহ প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মলে জমায়েত হবেন। সেখান থেকে একটি শোভাযাত্র বের করা হবে। শোভাযাত্রাটি টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে।
সকাল ১১টায় টিএসসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও মানবিক চেতনা বিকাশে উচ্চশিক্ষা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য রামেন্দু মজুমদার। ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত থাকবেন প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ ও প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি, প্রাক্তন প্রো-ভিসি, প্রফেসর এমিরিটাস, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির প্রতিনিধিরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এক শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করেছেন। বাণীতে তিনি বলেন, ‘এক শতকের অনন্য এক মাইলফলক ছোঁয়ার অভিযাত্রায় ৯৬ বছরে পা রাখলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কুসংস্কার থেকে জাতিকে মুক্ত করা, দেশের নাগরিকদের আধুনিক জীবনাদর্শে উজ্জীবিত করা, তাদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিবান্ধব করে তোলার ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের সকল আন্দোলন ও সংগ্রামের সূতিকাগারও এ বিশ্ববিদ্যালয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রদীপ্ত বাংলাদেশের সকল শ্রেষ্ঠ অর্জনের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক অতি সুগভীর।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বিনির্মাণের পথে বিষকাঁটাস্বরূপ লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের শেকড় উপড়ে ফেলে মানবিক চেতনার অনন্য এক বাংলাদেশ গড়াই এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও মানবিক চেতনা বিকাশে উচ্চশিক্ষা।’’ মেধাবী প্রজন্ম তাদের মেধা, সৃষ্টিশীলতা আর মানবিক-নৈতিক মূল্যবোধ ও চেতনায় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে আরো উর্বর ও ঐশ্বর্য্যমণ্ডিত করে তুলবে বলে আমার বিশ্বাস।’
অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার আয়োজিত দুর্লভ পাণ্ডলিপি প্রদর্শন এবং সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কার্জন হলে বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি/গবেষণার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, দিবস উপলক্ষে চারুকলা অনুষদের আয়োজনে চিত্রকলা প্রদর্শনী চলছে। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হল দিনব্যাপী নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে হল, বিভাগ ও অন্যান্য অফিস দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এদিকে রমজান ও ঈদুল ফিতরের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মা-বাবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি চলে গেছে।
No comments:
Post a Comment