বাংলাদেশের বন্ধু ও ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি পাঁচ দিনের সফরে আজ বাংলাদেশে আসছেন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর এই প্রথম ভারতের বাইরে সফর করছেন প্রণব মুখার্জি। মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জিকে সঙ্গে নিয়ে এবারের সফরে তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এর মধ্যে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ও চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বক্তৃতা করবেন ভারতের প্রথম এই বাঙালি রাষ্ট্রপতি। অবসরপ্রাপ্ত হলেও প্রণব মুখার্জিকে সর্বোচ্চ ভিভিআইপি মর্যাদায় বরণ করতে প্রস্তুত ঢাকা। তাকে সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি দিতে প্রস্তুত চট্টগ্রামও। সফরসূচি অনুসারে, জেট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আজ বিকাল ৪টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন প্রণব মুখার্জি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাসহ বিভিন্ন পদস্থ ব্যক্তিরা তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং স্মৃতি জাদুঘরও পরিদর্শন করবেন তিনি। অবস্থান করবেন প্যানপ্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে। রাতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আয়োজনে নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি। পরদিন বাংলা একাডেমিতে ‘বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রণব মুখার্জি। দেশ-বিদেশের তিন শতাধিক কবি-লেখক-সাহিত্যিক-সমালোচকদের এই সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রণব মুখার্জি। এদিন রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আয়োজনে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন প্রণব। এর আগেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে বৈঠক হবে তাঁর। পরদিন মঙ্গলবার সকালে প্রণব মুখার্জি চট্টগ্রাম পৌঁছে যাবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুপুর ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত প্রণব মুখার্জি চবির শহীদ আবদুর রব হলের মাঠে আয়োজিত সমাবর্তন বক্তা হিসেবে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। চবির পক্ষ থেকে তাকে সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। পরে প্রণব মুখার্জিকে মাস্টারদা সূর্য সেনের জন্মভূমি রাউজানে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে রাউজান কলেজের পাশে মাস্টারদার আবক্ষ মূর্তিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর পাশাপাশি সূর্য সেন পাঠাগার ও প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শন, নগরীর পাহাড়তলীতে প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদারের স্মৃতিবিজড়িত ইউরোপিয়ান ক্লাব এবং ব্রিটিশ অস্ত্রাগারের স্থান পরিদর্শন করবেন।
রাতে অবস্থান করবেন সেখানকার রেডিসন ব্লু হোটেলে। সেখানেই রাতে নৈশভোজের আয়োজন করেছেন স্থানীয় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন। সেখানে প্রণব মুখার্জির সাক্ষাৎ পাবেন বন্দরনগরীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। পরদিন বুধবার ঢাকায় ফিরে সরকারি প্রটোকলের বাইরে থাকা পরিচিত ও ব্যক্তিগত শুভানুধ্যায়ীদের সাক্ষাৎ দেবেন প্রণব মুখার্জি। বৃহস্পতিবার জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করার আগে বাংলাদেশে থাকা ভারতীয়দের সঙ্গেও একটি অনুষ্ঠানে থাকবেন প্রণব মুখার্জি।
প্রণব মুখার্জি ২০১২ সালের ২৫ জুলাই ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন শেষে গত বছরের ২৪ জুলাই অবসরে যান ভারতীয় রাজনীতির এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৩৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং প্রণব মুখার্জি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে এমএ এবং আইন বিষয়ে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। জীবনের প্রথমভাগে ডাক ও টেলিগ্রাফ বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কিছু দিন কলেজের শিক্ষকতা শেষে সাংবাদিকতাও করেছেন প্রণব মুখার্জি। ছিলেন ভারতের শীর্ষ একটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৬৯ সালে প্রথমবার ভারতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্যসভায় নির্বাচিত প্রণব প্রায় পাঁচ দশক ছিলেন ভারতের পার্লামেন্টে। ১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সালেও তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে কেন্দ্রীয় শিল্পোন্নয়ন উপমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রথম সে দেশের কেবিনেটে যোগদান করেন। ক্যাবিনেটে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতির পর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ২০০৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত। আবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ২০০৯ সালে। ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত এ দায়িত্বেই ছিলেন প্রণব মুখার্জি।
No comments:
Post a Comment