পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে আহত হয়ে দুই হাত হারানো সিয়াম আহম্মেদ খানকে অফিস সহায়ক পদে চাকরি প্রদান করেছে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)।
চলতি মাসের ৬ মে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসে যোগদান করেন তিনি। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মশুরা গ্রামের ফারুক আহম্মেদ খানের ছেলে সিয়াম আহম্মেদ খান।
স্থানীয় ও সিয়ামের পরিবার সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়াতে যাওয়ার পথে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত হন সিয়াম আহম্মেদ খান (২০)। অসুস্থ সিয়ামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে সংক্রমণ দেখা দেয়ায় অস্ত্রোপচার করে কবজির ওপর থেকে দুই হাত কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু এতে দমে যাননি সিয়াম। প্রতিবন্ধকতা জয় করে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন তিনি।
সিয়াম আহম্মেদ বলেন, আমরা অনেক গরিব। পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে আহত হয়ে দুই হাত হারিয়েছি। দুই হাত হারিয়েও অন্যের বোঝা হইনি। আমি এখন নড়িয়া সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স করছি। এখন আবার শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আমাকে অফিস সহায়ক পদে চাকরি দিয়েছে। আমি ও আমার পরিবার তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে চাই।
শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. সোহরাব আলী বিশ্বাস জানান, সিয়াম খান বৈদ্যুতিক তড়িতাহত হয়ে দু-হাত হারানোর কারণে মানবিক ও ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান তাকে চাকরির জন্য প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে রাজি হয়ে গত ৩০ এপ্রিল চাকরির জন্য আবেদন করে সিয়াম। আবেদনের প্রেক্ষিতে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে অফিস সহায়ক পদে সিয়ামের চাকরি হয়। সে ৬ মে চাকরিতে যোগদান করেছে। চাকরির পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে পারবে সিয়াম। সমিতির বেতন কাঠামো অনুযায়ী সিয়ামের মূল বেতন ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। মূল বেতনসহ বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, বিদ্যুৎ ধোলাই ভাতাসহ প্রতিমাসে ২৩ হাজার ৯২৪ টাকা পাবে সিয়াম। তিনি বছরে দুটি বোনাস ও বৈশাখী উৎসব ভাতা পাবে। চাকরি শেষে এককালীন ৪০ লাখ টাকার ওপরে পাবে সিয়াম। শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারি সিয়ামের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করবে।
সিয়াম আহম্মেদ খানের মা নাজমা বেগম বলেন, হাত অকেজো হওয়ার কারণে আমার ছেলের অনেক কষ্ট হয়। তবুও লেখাপড়া করে চাকরি পেয়েছে। আমি খুব খুশি হয়েছি।
বাবা ফারুক আহম্মেদ খান বলেন, আমি গরিব মানুষ। ছেলের চিকিৎসা ও লেখাপড়া করিয়ে এখন পথে বসেছি। ছেলে চাকরি পাইছে, আমি খুব আনন্দিত। ওর জন্য সবাই দোয়া করবেন।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment