শুক্রবার বাদ ফজর বয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা।
প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা শুরুর ৪০ দিন আগে অনুষ্ঠিত হয় এ জোড় ইজতেমা। এ পাঁচদিনই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরপর চলবে ইসলামের দাওয়াতি কাজের বয়ান। আর আগামী মঙ্গলবার বাদ জোহর মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এ জোড় ইজতেমা শেষ হবে।
ইতোমধ্যে কয়েক হাজার মুসল্লি জোড় ইজতেমায় অংশ নিতে মাঠে সমবেত হয়েছেন। দেশি-বিদেশি প্রায় তিন লাখ মুসুল্লি এ জোড় ইজতেমায় অংশ নিবেন বলে ইজতেমা কর্তৃপক্ষের ধারণা। স্থানাভাব ও মুসল্লিদের চাপ সামলাতে এবারও দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করছেন তাবলিগ জামাত কর্তৃপক্ষ।
এবারের প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা আগামী ৯,১০ ও ১১ জানুয়ারি এবং সমাপনী পর্বের ইজতেমা ১৬,১৭ ও ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলে তাবলিগ জামাত সূত্রে জানা গেছে।
দ্বিনের মেহনতে নিয়োজিত তাবলিগ জামাতের বিভিন্ন মেয়াদের চিল্লাধারী মুসল্লিদের একান্তই হেদায়েদি সম্মেলন এই ‘জোড় ইজতেমা’। এতে তাবলিগ মুরব্বিরা দ্বিন প্রচারে নিয়োজিত কাফেলার উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করে থাকেন। জোড় ইজতেমায় তিন চিল্লাধারী (৪০ দিনে এক চিল্লা) মুসল্লিদের সংখ্যাই বেশি। ছয়টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে তাবলিগ জামাত দ্বিনের মেহনত করে থাকেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমার মুরুব্বিরা।
এগুলোর মধ্যে কালেমা: আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কোনো মা‘বুদ নেই, আর হযরত মোহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা’আলার রাসুল।
নামাজ: হুজুর (স.) যেভাবে নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবিদের যেভাবে নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন সেইভাবে নামাজ পড়ার যোগ্যতা অর্জন করা।
ইলম ও জিকির: আল্লাহ তাআলার কখন কী আদেশ-নিষেধ ও হুজুরের (স.) তরিকা জেনে সে অনুযায়ী আমল করা।
ইকরামুল মুসলিমিন: প্রত্যেক মুসলমান ভাইয়ের কিসমত জেনে তার সম্মান করা।
সহিহে নিয়্যত: ‘আমরা যেকোনো কাজ করি উহা আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য করি’ এবং
দাওয়াত ও তাবলিগ: আল্লাহর দেয়া জানমাল ও সময় আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে এর সহিহ শিক্ষা ব্যবহার করা। এই ছয়টি বিষয়কে তাবলিগ জামাতের পরিভাষায় ছয় নম্বর বা ছয় উসূলও বলা হয়। ছয় নম্বর ছাড়াও ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ মুরব্বিরা ইসলামের সার্বিক বিষয় নিয়েও আম বয়ান করে থাকেন।
বিশ্ব ইজতেমা ও জোড় ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, তিন চিল্লায় অংশ নেয়া দেশি-বিদেশি মুসল্লি, আলেম ওলামারা এ জোড় ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জোড় ইজতেমা শুরু হয়েছে। প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের ৪০দিন আগে এ জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তাবলিগ জামায়াতের শীর্ষ মুরুব্বিরা বয়ান করেন। এ বায়নে দাওয়াতি কাজ বা ইসলাম প্রচারের কাজ কীভাবে আরো সহজ ও মনগ্রাহী করা যায় এবং নিজেদের কোনো ভুলত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। জোড় ইজতেমা শেষে মুসল্লিদের একটি অংশ দাওয়াতি কাজে দেশ-বিদেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়বেন এবং একটি অংশ ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতি কাজের তদারকিতে থাকবেন। এবারের জোড় ইজতেমার সকল প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। জোড় ইজতেমায় অংশ নিতে দেশি মুসল্লিদের পাশাপাশি ইতোমধ্যে শতাধিক বিদেশি মুসল্লি ময়দানে এসেছেন।
মুরুব্বি গিয়াস উদ্দিন আরও জানান, টঙ্গীর এ বিশ্ব ইজতেমা ময়দানেই আগামী ৯ ও ১৬ জানুয়ারি তিনদিন করে দু’পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। এ ইজতেমা বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সুনামের সাথে পরিচিতি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। ক্রমবর্ধমান মুসল্লিদের কথা চিন্তা করে গত কয়েক বছর ধরে এক পর্বের বিশ্বইজতেমা দু’পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তারপরও মুসুল্লিদের স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। এমতাবস্থায় এক শ্রেণীর দখলদার ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম দিকের প্রবেশপথসহ উন্মুক্তস্থল দখল করে নিয়েছে। তার দাবি জনস্বার্থে র্যাংগস ভবন অপসারণ করা হয়েছে। ময়দানের পর্ব পাশের বাটা, হোন্ডা ও টেশিস কারখানার অব্যবহৃত জমি ছাড়াও তুরাগ নদীর পশ্চিম তীরে ইজতেমা ময়দানের ব্যবহারের জমি ও বিভিন্ন জনকে রাজউকের বরাদ্দ দেয়া জমিতে স্থাপনা ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে ইজতেমা ময়দানের প্রবেশপথ দখল করে ফেলেছে। ফলে এবার নদীর পশ্চিমে ভাসমান সেতু নির্মাণে সেনাবাহিনীর গাড়ি ও মুসল্লিদের গাড়ি পার্কিংসহ প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হবে। তাই তিনি দেশ ও জাতীর স্বার্থে এসব জমি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment