অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের ম্যাকসভিল শহরটা শোকের কালোতে ছেয়ে গিয়েছিল বুধবার।
শান্ত ও ছোটো শহরটির হাজার তিনেক মানুষের হৃদয়ে এদিন যুগপৎ বয়ে গেছে ভালোবাসা আর শোকের প্রবাহ। প্রিয় ক্রিকেটার ও মানুষ ফিলিপ হিউজকে এদিন শেষ বিদায় জানিয়েছে তারা।
প্রায় ৮০ মিনিট স্থায়ী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শুরু করেন ফাদার মাইকেল অ্যালকক। গম্ভীর ও শান্ত কন্ঠে বলা ফাদারের শুরুর কথায়ই এক সঙ্গে ভালোবাসা আর শোকের আবহ মিশে ছিল।
“তার ২৬ বছরের জীবন উদযাপন করার জন্য আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। কাছে ও দূরে তার হৃদয় যাদের স্পর্শ করেছে, আমরা সবাই আজ প্রার্থনা করব। তার জীবন উদযাপন করার মাধ্যমে আমরা কিছু সান্ত্বনা খুঁজব।”
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ২৫ নভেম্বর শেফিল্ড শিল্ডে নিউ সাউথ ওয়েলস ও সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে পেসার শন অ্যাবটের শর্ট বলে হুক করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পান হিউজ।
অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সেন্ট ভিনসেন্টস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মাথায় অস্ত্রোপচারের পরপরই চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুই দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হার মানেন হিউজ। ২৬তম জন্মদিনের তিন দিন আগে গত বৃহস্পতিবার না ফেরার দেশে চলে যান অস্ট্রেলিয়ার এই টেস্ট ক্রিকেটার।
তরুণ হিউজকে শেষ বিদায় জানাতে গিয়ে এ কারণেই হয়ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শুরুতে বাজানো হয় বব ডিলনের ‘ফরএভার ইয়ং’ গানটি।
হিউজকে চিরকাল তরুণ থাকতে বলার আহবানে ভারী হয়ে ওঠে ম্যাকসভিল হাই স্কুলের মিলনায়তন। এর মধ্যেই বক্তব্য শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক।
হিউজ না ফেরার দেশে চলে গেলেও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট তাকে কখনোই ভুলবে না। হৃদয়ের সব শোক আর ভালোবসাকে একীভূত করে ক্লার্ক যেন সেই ঘোষণাই দিলেন।
“আমাদের খেলে যেতে হবে। তাই আমার প্রিয় ছোট ভাই, শান্তিতে থাক। তোমার সঙ্গে মাঝের ২২ গজেই দেখা হবে।"
ভাই জ্যাসন আর বোন মেগান হিউজের উদ্দেশ্যে চিঠি পড়েন। চোখের জলে ছোট ভাইকে বিদায় দিতে গিয়ে জ্যাসন বলেন, “আমি এর চেয়ে ভালো একটা ছোটো ভাই আর চাইতে পারতাম না। ...আমি তোমাকে মিস করছি। আমি তোমাকে নিয়ে গর্বিত...। আমি তোমাকে ভালোবাসি আর ভালোবেসে যাব।”
ম্যাকসভিল হাই স্কুলের হল ঘরে প্রায় ১ হাজার মানুষ হিউজকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। এদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান দলের সদস্যরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন সাবেক ক্রিকেটাররা। রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শেন ওয়ার্নরাও ভালোবাসা আর চোখের জলে বিদায় দেন প্রিয় অনুজকে।
হিউজকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ম্যাকসভিল হাই স্কুলে যান অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট। ছিলেন যার বাউন্সারে হিউস লুটিয়ে পড়েছিলেন, সেই অ্যাবটও।
হিউজকে বিদায় জানাতে অস্ট্রেলিয়া সফররত ভারত দলের প্রতিনিধি হিসেবে বিরাট কোহলি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ব্রায়ান লারাও ছিলেন সেখানে। ছিলেন নিউ জিল্যান্ডের কিংবদন্তি রিচার্ড হ্যাডলি।
যারা স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেননি, তারা দূর থেকেই অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হিউজকে শেষ বিদায় জানান। এদের মধ্যে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডস।
শুধু ক্রিকেট মহলই নয়, হিউজকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ম্যাকসভিল হাই স্কুলের বাইরে হাজির হয়েছিলেন অনেকেই। হাজারের বেশি মানুষ স্কুলের বাইরে তীব্র গরম উপেক্ষা করে বড় পর্দায় দেখেন হিউসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান।
ক্রিকেট মহল থেকে সাধারণ মানুষ-সবাইকে এদিন আহবান জানানো হয় তাদের ব্যাট আর ক্রিকেট সামগ্রী ঘরের বাইরে অথবা মাঠে রেখে যেন হিউজকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ তাই করেছে।
আর হিউজের নিজের ব্যাটটি দিয়ে দেয়া হয় তার কফিনের সঙ্গে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শেষ হয় কয়েকদিন আগে একটি কনসার্টে হিউজকে উৎসর্গ করা এল্টন জনের একটি গানে-ডোন্ট লেট দ্য সান গো ডাউন অন মি।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে হিউজের বাবা আর ভাইয়ের সঙ্গে কফিন ধরে বাইরে নিয়ে আসেন ক্লার্ক। এরপর শববাহী গাড়িতে তোলা হয় হিউজের কফিন। সেই গাড়ি ঘুরেছে পুরো ম্যাকসভিল শহর। আর হিউজের জন্য অগাধ ভালোবাসা ও গভীর শোক নিয়ে মৌনভাবে তার পেছনে ছিলেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আসা মানুষেরা।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment