শনিবার সন্ধ্যায় খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, “আমি বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি, এতে তেমন ক্ষতি হবে না। ফার্নেস অয়েলের বদলে ডিজেল বা পেট্রোল হলে অনেক ক্ষতি হত। ফার্নেস অয়েলের রাসায়নিক ক্ষতিকর প্রভাব কম।
“এছাড়া এখন বর্ষাকাল হলে নদীর জোয়ার বেশি হত এবং তেল বেশি অঞ্চলে ছড়িয়ে তাতে আরো বেশি ক্ষতি হত। তবে তা না হওয়ায় তেমন ক্ষতি হবে না।”
মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের ভিতরে যাতে তেল ঢুকতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন খালের মুখে মশারির নেট, কাপড় দিয়ে তেল আটকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে নদী থেকে তেল সংগ্রহ করা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার সুন্দরবনের শেলা নদীতে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েলবাহী একটি ট্যাংকার একটি কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যায়। এই ফার্নেস অয়েল নিঃসরিত হয়ে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের (বাংলাদেশ অংশে ৬ হাজার) সুন্দরবনের প্রায় ৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন।
এসব এলাকায় নদী ও অসংখ্য খালে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েল তীর ও চরের মাটিতে যেসব স্থানে লেগেছে সেখানে নতুন করে চারা গজাবে না বলে তারা মনে করছেন।
নদী সংলগ্ন এলাকায় এই ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বনের যেসব গাছপালায় তেল লেগেছে, সেগুলোও অক্সিজেন না পেয়ে ধীরে ধীরে মারা যাবে বলে মনে করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত, যিনি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় গঠিত এই ঘটনা তদন্ত কমিটির একজন সদস্য।
এদিকে বন্যপ্রাণীর ওপর ফার্নেস অয়েলের বিরূপ প্রভাব ইতোমধ্যে দেখা যেতে শুরু করেছে।
ইরাবতী ডলফিনের অভয়াশ্রমের কাছে ওই ট্যাংকার দুর্ঘটনার পর ওই এলাকায় বিলুপ্তপ্রায় এই জলজ প্রাণীর বিচরণ দেখা যাচ্ছে না। তেল দূষণের পর কুমিরের দেখাও মিলছে না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। কিছু মৃত কাঁকড়াও দেখা গেছে, যাদের গায়ে জমে ছিল তেলের প্রলেপ।
এখন স্থানীয়দের হাঁড়ি-পাতিল ও স্পঞ্জ নিয়ে পানিতে ভাসমান তেল সংগ্রহে নামানো হয়েছে, যা কিনে নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের উদ্যোগে স্থানীয় গ্রামবাসীদের মাধ্যমে শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়ে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মোট ৭২০০ লিটার তেল সংগ্রহ করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি ৩০ টাকা লিটার দরে কিনে নিয়েছে।
এ ঘটনায় নৌ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ‘উদাসীনতার’ যে অভিযোগ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত করেছেন তা নাকচ করেছেন মন্ত্রী শাজাহান খান।
তিনি বলেন, “সরকার তথা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কারও কোনো উদাসীনতা নেই। আমরা সব সময় ঘটনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ এবং ঘটে যাওয়া সমস্যা সমাধানের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
“ইতোমধ্যে তিনটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। অয়েল ট্যাংকার সাউদার্ন স্টার-৭ এ ধাক্কা দেওয়া জাহাজ এমটি টোটালকে নারায়ণগঞ্জে আটক করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তেল সংগ্রহ করা হচ্ছে।”
তবে ট্যাংকার ডুবির খবর বিলম্বে পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন মন্ত্রী। ঘটনাটি ভোরে ঘটলেও বিকেলে জানতে পারেন বলে জানান তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহন মন্ত্রী বলেন, ঘষিয়াখালী চ্যানেল ড্রেজিং না হওয়ায় বিকল্প পথ হিসেবে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।
“বিগত কোনো সরকার ঘষিয়াখালী চ্যানেল ড্রেজিং করেনি, যার দায়ভার আমাদের সরকারের ঘাড়ে এসে পড়েছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় এ চ্যানেলটির পলি অপসারণে ড্রেজিং করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
ড্রেজিং করে আগামী এক বছরের মধ্যে ঘষিয়াখালী চ্যানেল দিয়ে নৌ যান চলাচল শুরুর আশা প্রকাশ করেন তিনি
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারুক আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment