বাংলা
শব্দ আগ্নেয়গিরি এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Volcano, যা এসেছে ইতালিয়ান
শব্দ Vulcano থেকে। ইতালিয়ান শব্দটির মূলে রয়েছে ল্যাটিন শব্দ Vulcanus,
যার অর্থ জলন্ত পর্বত। আবার অনেকের মতে ইংরেজি Volcano শব্দটির উৎপত্তি
রোমানদের অগ্নি দেবতা Vulcan এর নাম থেকে। আগ্নেয়গিরির রহস্য সম্পর্কে
মানুষের জানার আগ্রহের শেষ নেই। চলুন আজ তবে জেনে নেওয়া যাক আগ্নেয়গিরি
সম্পর্কে বেশ কয়েকটি অজানা তথ্য।
১. সমুদ্র এবং পৃথিবীর এই ভূপৃষ্ঠের প্রায়
৮০ ভাগেরই সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা থেকে। ম্যাগমা, গলিত
পাথর এবং আগ্নেয়গিরি ধ্বংসাবশেষই রূপ নিয়েছে বিভিন্ন আকারের ভূখণ্ডে। যেমন
পর্বত, মালভূমি, বিভিন্ন দ্বীপ। শুধু ভূপৃষ্ঠই নয়, শত শত মিলিয়ন বছর ধরে
আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত গ্যাসই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বর্তমান রূপ প্রাপ্তিতে
অনেকাংশে দায়ী।
২. পৃথিবীর শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত ঠিক
কতটি আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব দেখা গিয়েছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও
ভূতাত্ত্বিকদের ধারণা, পুরো পৃথিবীতে (সমূদ্রের নিচের আগ্নেয়গিরি ছাড়া)
১৩০০ থেকে ১৫০০ আগ্নেয়গিরি রয়েছে। যেগুলো গত ১০ বছরে কোনো না কোনো সময়ে
সক্রিয় ছিল। সমুদ্রের পৃষ্ঠে অবস্থিত প্রায় ৫০০টি আগ্নেয়গিরি বর্তমানে
সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। যার ৫০ থেকে ৬০টি প্রতি বছরই লাভা উদগিরণ করে।
৩. বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরি মহাদেশীয় ধাঁর বা কিনারায় অবস্থিত, যেখানে গঠনাত্মক প্লেটগুলো সংযুক্ত বা বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
৪. ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়।
৫. হাওয়াই এর ‘মাওনা কেয়া’ হলো সবচেয়ে
উঁচু আগ্নেয়গিরি। এটি ঢাল বিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি। যদি সমুদ্রের নিচের অবস্থিত
এর গোড়ার দিক থেকে হিসাব করা হয়, তবে এটি মাউন্ট এভারেস্টের চেয়েও উঁচু।
যার উচ্চতা প্রায় ৩৩ হাজার ৫০০ ফুট।
৬. ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি
হচ্ছে কিলাওয়ে। এর অবস্থানও হাওয়াই দ্বীপে। ১৯৮৩ সালে এর প্রথম অগ্নুৎপাত
শুরু হয়। বিংশ শতাব্দীতে এর ৪৫ বার অগ্নুৎপাত হয়েছে। সর্বশেষ অগ্নুৎপাতটি
ঘটে ২০১১ সালের মার্চ মাসে। কিলাওয়ের প্রায় ৭০ ভাগ পৃষ্ঠই লাভায় তৈরি।
৭. ইতালির সিচিলিয়ান উপকূলে ইটনা পর্তবটি ৩৫০০ বছর ধরে সক্রিয় রয়েছে। সর্বশেষ অগ্নুৎপাতটি ঘটে জানুয়ারি ২০১১ সালে।
৮. ১৯৯১ সালে ফিলিপাইনে অবস্থিত পিউনাটুবো
পর্বতে অগ্নুৎপাত ছিল বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় অগ্নুৎপাত। এর ফলে বৈশ্বিক
তাপমাত্র ০.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পরিবর্তিত হয়। ২২ মাইল পর্যন্ত এর ছাই
বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
৯. ১৮১৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার সাম্বুয়া দ্বীপে অবস্থিত তাম্বোরা পর্বতের অগ্নুৎপাতটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অগ্নুৎপাত।
১০. আগ্নেয়গিরিগুলো উদগিরণের ধরণ এবং ম্যাগমা এর গঠন এর ভিত্তিতে সাধারণত চার ধরণের হয়ে থাকে।
যৌগিক আগ্নেয়গিরি : পার্শ্বযুক্ত খাড়া এবং মোচাকৃতির হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের লাভা, ছাই ও পাথর উদগিরণ করে থাকে এবং এদের চূঁড়ায় বিশাল খাঁদ দেখা যায়।
ঢাল বিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি : এটি প্রশস্ত কিন্তু আলতোভাবে লেগে থাকা ঢাল বিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি। এর লাভা উদগিরণের পর বেশি দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যায় না।
অঙ্গারের সমন্বয়ে গঠিত মোচাকৃতির আগ্নেয়গিরি: সাধারণত এটির উদগিরণ অল্প সময়ের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। এবং চূঁড়ায় গোলাকৃতি খাঁদের সৃষ্টি করে।
গম্ভুজাকৃতির লাভাবিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি: এর লাভা বেশ চটচটে ধরনের হয়। তাই বেশি দূর পর্যন্ত প্রবাহিত হয় না এবং চূঁড়ার দিকে গম্বুজের মতো জমে থাকে।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া
নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment