বাঙালি নারীর বিয়ে মানেই কারুকাজে পূর্ণ বেনারসী শাড়ি। তবে এখন আর বিয়েতেই সীমাবদ্ধ নেই বেনারসী শাড়ি। বর্তমানে সব উৎসবেই নারীরা বেনারসী শাড়ি ব্যবহার করেন।
এবার ঈদকে সামনে রেখে বেড়ে গেছে বেনারসী পল্লীর ব্যস্ততা। তবে ব্যস্ততা বাড়লেও ঐতিহ্যবাহী বেনারসী শাড়ির কারিগররা ভালো নেই। উদয়-অস্ত পরিশ্রম করেও পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত মজুরি। এমনকি ঈদ উপলক্ষে পান না বাড়তি বেতন-ভাতা। তাই আর্থিক টানাপোড়নে জীবন-যাপন করতে হয় তাদের।
মো. বিলাল। বয়স পঞ্চাশের কোটা পেরিয়েছে। টানা ৩৫ বছর ধরে কাজ করছেন রাজধানী ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরের বেনারসী পল্লীতে।
দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেও আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। দিন-রাত খেটেও মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকার বেশি উপার্জন করতে পারেন না। তার ওপর এই টাকায় চালাতে হয় ৫ জনের সংসার।
সোমবার (১৩ জুন) মিরপুর ১০ নম্বরে বেনারসী পল্লীর কারখানাগুলো ঘুরে কারিগরদের জীবন-যাপনের এমন চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেলো, এখানকার কারখানাগুলোতে কাজ করা কারিগরদের ৯৫ শতাংশেই লেখাপড়া জানে না। অন্য সেক্টরে কাজ পায় না বলে কম মজুরিতেই তাই দিনের পর দিন খেটে যাচ্ছে।
মিরপুরের এই বেনারসী পল্লীর শাড়ি যাচ্ছে বসুন্ধরা সিটি, নিউ মার্কেট, ইস্টার্ন মল্লিকা, ইস্টার্ন প্লাজাসহ দেশের বিভিন্ন শপিংমল ও জেলায়।
একটি কারুকার্য খচিত বেনারসী শাড়ি তৈরি করতে একজন শ্রমিকের ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। শাড়ি তৈরিতে খরচ পড়ে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে একজন কারিগর পায় ১ হাজার ৬০০ টাকা। তবে মালিকপক্ষ এসব শাড়ি বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এছাড়া যে শাড়ি তৈরিতে খরচ পড়ে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর বিভিন্ন শপিং মল ও মার্কেটে তা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়।
বিলাল জানান, শাড়ির কাজ শিখে এখানে কাজ করছেন ৩৫ বছর ধরে। লেখাপড়া জানেন না। এখন বয়স হয়েছে শরীর চলে না । চোখেও ভালো করে দেখেন না। তাই বেশি কাজ করতে পারেন না। আজকে কাজ বন্ধ করলে কাল না খেয়ে থাকতে হবে। অনেক কষ্টে দিন পার করছেন তিনি।
বেনারসী পল্লীর আরেক কারিগর নাছিম। ৩০ বছর ধরে শাড়ি তৈরির কাজ করছেন। মিরপুর বেনারসী পল্লীতেই আছেন ২৫ বছর।
তিনি জানান, যখন এখানে কাজ শুরু করেন তখন একটা শাড়ি তৈরি করে ৩৫০ টাকা পেতেন। এখন পান ১৬০০ টাকা। আগে জিনিসপত্রের দাম কম ছিলো বলে ওই সময়েই ভালো ছিলেন। এখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক কষ্টে দিন চালাতে হয়।
নাছিম বলেন, আমরা রাত দিন পরিশ্রম করে একটা শাড়ি তৈরি করি। এই শাড়ি মালিকরা মার্কেটে নিয়ে খরচের ডাবলের বেশি দামে বিক্রি করে। তারা ঠিকই তার লাভের মুখ দেখে। আমরা ঈদে বোনাসের আশা করি, কিন্তু একটা টাকাও বোনাস পাই না।
হাজী মোহাম্মাদ মমতাজ আলী বেনারসী কারখানার ম্যানেজার মো. আকতার বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেনারসী শাড়ির চাহিদা অনেক কমে গেছে। ব্যবসা একবারেই খারাপ।
এছাড়া ভারতীয় শাড়ি আমদানি ও সুতার দাম বেড়ে যাওয়া দেশি বেনারসীর চাহিদা কমে যাচ্ছে। ভারতীয় শাড়ি থেকে বেনারসীর দাম বেশি বলে মানুষ এখন এসব শাড়ি তেমন কেনে না বলে জানান তিনি।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment