দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার।
বুধবার (০৮ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত পরিপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়, উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সমমানের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’র উদ্ধৃতি দিয়ে পরিপত্রে বলা হয়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও খেলাধুলা পাঠ্য বিষয় হিসেবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাঁতারকে অন্যতম একটি ক্রীড়া হিসেবে গণ্য করার পাশাপাশি, জীবন রক্ষাকারী কৌশল চর্চা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পরিপত্রে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের ওপর ইউনিসেফের একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, নদীমার্তৃক বাংলাদেশে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ জন এবং প্রতি বছরে প্রায় ১৮ হাজারের বেশি ছেলে-মেয়ে সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যায়।
তাই সরকার এখন থেকে দেশের সব উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সমমানের মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
কার্যক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষার্থী তথা আগামী প্রজন্মকে জীবন রক্ষাকারী কৌশল চর্চায় সক্ষমতা অর্জনে উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সমমানের মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের পুকুরে বা জলাশয় স্বাস্থ্যসম্মত ও সাঁতার উপযোগী করতে পরিপত্রে বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নিকটবর্তী মজা-পুকুর বা জলাশয়গুলো ব্যবহার উপযোগী করার জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে জেলা ও উপজেলা পরিষদের সহযোগিতা গ্রহণ করা যাবে।
সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আবশ্যিকভাবে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, লাইফ জ্যাকেটের পাশাপাশি সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনে দেশীয় প্রচলিত সরঞ্জাম ব্যবহার করা যাবে।
সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের সময় সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) অথবা সাঁতার প্রশিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সহশিক্ষার ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের জন্য ভিন্ন সময় নির্ধারণ করতে হবে।
ছাত্রীদের সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের সময় সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) অথবা সাঁতার প্রশিক্ষকের পাশাপাশি একজন মহিলা শিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে পরিপত্রে।
এতে আরও বলা হয়, পুকুরবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পার্শ্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুকুর বা জলাশয় ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা সমাধান করবেন।
মহানগরীর যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুকুর বা উপযুক্ত জলাশয়ের ব্যবস্থা নেই তাদের মহানগরীর কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় ক্রীড়া কমপ্লেক্স বা অন্যান্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান সাঁতার প্রশিক্ষণ সুবিধা ব্যবহার করে কার্যক্রমটি পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সাঁতার অবকাঠামো ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা দিতে পারে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষকের (শারীরিক শিক্ষা) সহায়তায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং এ সংক্রান্ত মাসিক প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করবেন।
তবে মহানগরীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি/সার্বিক) ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে।
পরিপত্রে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) অধীন উচ্চ মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সমমানের মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাঁতার প্রশিক্ষণ ও চর্চার বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি/সার্বিক), জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হল।
তারা ত্রৈ-মাসিক প্রতিবেদন মাউশি’র মহাপরিচালকের কাছে দাখিল করবেন। মাউশি তিন মাস পরপর এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment