পূর্ণাঙ্গ অজু পবিত্রতা অর্জনের উপায়। তবে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সুন্নত তরিকায় অজু করা হলে তা একটি নেক আমলও বটে। এটি অতি সহজ আমল, যা আমরা সকলেই করি এবং দিনে একাধিকবার করি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে অজুর প্রয়োজন হয়। আমরা যদি একটু খেয়াল করে সুন্নত তরিকায় এই সহজ ও প্রয়োজনীয় কাজটি সম্পাদন করি তাহলে অতি সহজে আমরা পেতে পারি অনেক বড় বড় পুরষ্কার।
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যে কোনো ব্যক্তি অজু করে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে অজু করে অতঃপর বলে, ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুল্লাহি ওয়া রাসূলুহ।’ তবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে প্রবেশ করতে পারবে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৩৪; জামে তিরমিজি, হাদিস ৫৫
বর্ণিত হাদিসটি একটি সুসংবাদবাহী সুন্দর হাদিস। এখানে নবী করিম (সা.) অজুর ফরজ, সুন্নত ও আদবের প্রতি লক্ষ রেখে উত্তমরূপে করার এবং অজুর শেষে দোয়া পড়ার একটি সহজ আমলের কথা বলেছেন। যা দেহকে সজীব ও পবিত্র করে, মনে প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা দান করে। এই সহজ আমলের জন্যও আল্লাহতায়ালা তার বান্দাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করবেন বলে সু-সংবাদ দেওয়া হয়েছে। তার জন্য জান্নাতের কটি দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং সে নিজের ইচ্ছামতো যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
অন্যান্য হাদিসে অজুর আরো অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন হজরত ওসমান ইবনে আফফান (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অজু করে এবং উত্তমরূপে অজু করে, তার শরীর থেকে, এমনকি নখের নিচ থেকেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়। -সহিহ মুসলিম
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে আছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, মুসলিম বা মুমিন বান্দা যখন অজু করে, যখন সে মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে বা পানির শেষ ফোটার সঙ্গে ওই সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে দু চোখ দ্বারা করেছিল। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে ওই সব গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে হাত দ্বারা করেছিল। যখন সে দুই পা ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে ওই সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে সে চলেছিল। এভাবে সে গুনাহ থেকে পাকসাফ হয়ে যায়। -সহিহ মুসলিম
অন্য আরেক হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) সাহাবায়ে কেরামের সামনে হাউজে কাউসারের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, মানুষ যেমন তার হাউজ থেকে অন্য মানুষকে সরিয়ে দেয় তেমনি আমিও সেদিন কিছু মানুষকে সরিয়ে দেব। সাহাবারা আরজ করলেন, সেদিন কি আপনি আমাদের চিনতে পারবেন? নবী (সা.) ইরশাদ করলেন, বল তো, কারো যদি হাতে ও পায়ে সফেদ চিহ্ন বিশিষ্ট কিছু ঘোড়া থাকে এবং সেগুলোকে অসংখ্য কালো রংয়ের ঘোড়ার মাঝে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে সেই ব্যক্তি কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না? সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ, পারবে। ইয়া রাসূলুল্লাহ! নবী করিম (সা.) ইরশাদ করলেন, তেমনি তোমাদেরও এমন কিছু চিহ্ন হবে যা অন্য কোনো উম্মতের হবে না। কিয়ামতের দিন তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও অজুর কারণে ঝলমল করতে থাকবে।’-সহিহ মুসলিম
অন্য একটি সহিহ হাদিসে আরো একটি সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি যে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলিম যখন সুন্দরভাবে অজু করে অতঃপর চেহারা-মন উভয়কে আল্লাহ অভিমুখী করে দণ্ডায়মান হয় এবং করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করে তখন তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। -সহিহ মুসলিম
উল্লেখিত হাদিসগুলো থেকে অজু ও আনুষঙ্গিক কয়েকটি আমলের নির্দেশ পাওয়া যায়-
১. সুন্নত পদ্ধতিতে উত্তমরূপে অজু করা।
২. অজুর পর হাদিসে উল্লেখিত দোয়াটি পাঠ করা।
৩. দু’রাকাত তাহিয়্যাতুল অজুর নামাজ পড়া।
আমলগুলো খুবই সহজ কিন্তু বিনিময়ে রয়েছে বড় বড় কয়েকটি সুসংবাদ। ওই সুসংবাদগুলো হলো-
১. অজুর পানির সঙ্গে গুনাহসমূহ বের হয়ে যাবে।
২. কিয়ামতের দিন অজুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ঝলমল করবে।
৩. জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
৪. জান্নাতের সবকটি দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
অতএব সকলের উচিত, সুন্নত তরিকায় আমলটি করে এসব পুরস্কার লাভে প্রতিযোগিতা করা।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment