বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ঋতুর পরিবর্তন প্রকৃতিগতভাবে প্রায়ই বুঝতে পারা যায় না। বাংলাদেশের ছয় ঋতুর বেলায়ও এটা সত্য। এবার কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন। দেশে আষাঢ় এসেছে বৃষ্টিপাত নিয়েই। বর্ষা ঋতু তার প্রবল উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। ঝকঝকে রোদের দিন দেখার জন্যে আকুল তাই জনসাধারণ। প্রায় সবার মনেই প্রশ্ন- টানা বৃষ্টির শেষ কোথায়? পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কবে?
এর উত্তর জানতে সংবাদ প্রতিদিন২৪ অনলাইন ডটকম থেকে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরে। এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ শামীম হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন যে তথ্য আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, দু-একদিন এভাবেই বৃষ্টি হতে থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘৮ জুলাই আমাদের সভা হবে। সেই সভায় বিজ্ঞানীরা পরের কিছুদিনের আবহাওয়ার আগাম বার্তা তুলে ধরবেন। সেই সভার পর বৃষ্টিপাত পরিস্থিতি সম্পর্কে আরো পূর্বাভাস দেয়া যাবে।’
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (ঢাকা) যে বারতা, তাতে দেখা যাচ্ছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের এই ধারা থাকবে। তারা আরো জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয়। তা উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় আছে।
তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামীকাল সকাল নয়টা পর্যন্ত রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোনো কোনো এলাকায় মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার দেয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেক পূর্বাভাসে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বসের শঙ্কার কথাও বলা হয়েছে।
বৃষ্টিতে অচল জনজীবন
ঈদের আগে-পরে দুই-তিন দিন কম থাকলেও টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল মিলে দেশের প্রত্যন্ত অনেক এলাকা বন্যা হচ্ছে। আবারও পাহাড়-ধসের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। বৃষ্টির কারনে জনজীবন অচল হওয়ার পথে। চলাচলের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী আর চাকরিজীবীরা বিপাকে আছেন। দিনমজুর, পথব্যবসায়ী, ফেরিওয়ালা- এই ধরনের কর্মজীবীদের আয়-রোজগার কমে যাচ্ছে টানা বৃষ্টির কারণে।
বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতা এক নির্মম বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীতে। আর এ কারণে মতিঝিলে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে একজন অফিসগামী ব্যক্তি ওই এলাকাতে নদীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। মঙ্গলবার রাতভর বৃষ্টিতে আবার তলিয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। এর মধ্যে নগরীর বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলও রয়েছে। ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে নিত্য ভোগান্তির মালিবাগ, রাজারবাগ এলাকাও রয়েছে। পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা নিকুঞ্জের কিছু কিছু সড়কও সকালে পানিতে তলিয়ে থাকতে দেখা যায়।
কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও বুক ছুঁই ছুঁই পানি। এ যেন এক বহমান নদী। দৃশ্যত এমন পরিস্থিতি এখন চট্টগ্রামের। রসিকতা করে এখন কেউ কেউ বন্দরনগরীকে চট্টগ্রাম নদী বলছেন। তবে এ নদীতে শুধু নৌকা চলে না, চলে রিকশা, অটোরিকশা, বাস-মিনিবাসসহ নানা যানবাহন। এই পরিস্থিতিতে ভাসছে ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ ও ছোট-বড় বহুতল ভবন। ভাসছে গাছপালা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি।
দুই দিনের বৃষ্টিতে নগরীর খুলশি ও অক্সিজেনের পাহাড়ি এলাকা ছাড়া ৪১ ওয়ার্ডের সবকয়টি এলাকায় পানিতে তলিয়ে। গত সোমবার মধ্যরাতের পর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত টানা ভারী বর্ষণে ডুবে যায় বন্দরনগরীর এসব এলাকা। এরপর থেমে থেমে ভারী বর্ষণে বহমান নদীতে পরিণত হয় চট্টগ্রাম।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment