আগামী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) এমসিকিউ বা বহু নির্বাচনী অংশ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসরোধ, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের জন্য সবার মতামত নিয়ে আগামী পরীক্ষায় এমসিকিউ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। আগে যেখানে টিক চিহ্ন দিতে হতো এখন সেখানে দুই এক লাইন লিখতে হবে। তাতে লেখা ও পড়ায় মনোযোগী হবে শিক্ষার্থীরা।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগামী পিইসিতে এমসিকিউ থাকছে না। আমরা চাই নকলমুক্ত পরিবেশে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিক। প্রশ্ন ফাঁসের মতো বিষয়ে না জড়াক। শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে সরকারের যে প্রাণান্তকর চেষ্টা তার মধ্যে এ জাতীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। সবমহলের মতামতের ভিত্তিতে সরকার এমসিকিউ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী বলেন কিংবা অন্য পরীক্ষা বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের মতো যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলো নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে জ্ঞানী-গুণীদের মধ্যে, বিশেষজ্ঞদের মধ্যে, আমরা বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে অনেক পরামর্শ পেয়েছি। পরামর্শ সাধারণ মানুষ দিয়েছেন যেমন, তেমনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এমনকি রাষ্ট্রপতিও পরামর্শ দিয়েছেন।’
এমসিকিউয়ের পরিবর্তে আগের মতো সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আগের ব্যবস্থা যে মন্দ ছিল তা কিন্ত ঠিক না। আগে সংক্ষিপ্তভাবে প্রশ্ন থাকত, বলা হত দুতিন লাইন লেখ, পাঁচ লাইন লেখ তাতে কিন্তু লেখা এবং পড়া দুটোই করতে হতো শিক্ষার্থীদের। একইসঙ্গে তাকে বুঝতেও হতো। কারণ, না পড়লে, না বুঝলে এক লাইন দুই লাইন কী লিখবে? এমসিকিউয়ের পরিবর্তে সেই পদ্ধতিতে আমরা ফিরে যাওয়ার জন্য কাজ করছি। ইতোমধ্যেই স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কথা হচ্ছে, আগে টিক চিহ্ন দিতে হতো, এখন তাকে লিখতে হবে। তবে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লিখবে তা আমরা ঠিক করব।’
তিনি বলেন, ‘সরকার নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষার সব ব্যবস্থায় নিচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আমাদের কৌশলগুলো প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে ভালোভাবে ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা হচ্ছে।’
‘আমরা শুধু আইন করে কিংবা কায়দা করে এই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে চাই না। আইনি বিষয়টা তো আছেই, এটা আমাদের শেষ অস্ত্র। আমরা এমন কোনো পদ্ধতিতে যেতে পারি কি না যে পদ্ধতির প্রভাবে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ থাকবে না। আমরা এসব কারণে এমসিকিউয়ের পরিবর্তে এখন সংক্ষিপ্তরূপে প্রশ্ন-উত্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি’, বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এমসিকিউ যে থাকছে না, সেটা আমরা জানিয়ে দিয়েছি। যাদের জানা দরকার, শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা এখন থেকেই পিইসির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব আকরাম-আল-হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝিতে চলতি বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment