মাদারীপুর সদর উপজেলার ৬০নং উত্তর দুধখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে দিয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। আতঙ্কের মুখে দুইশতাধিক শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন, যা অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে আলাদা কোন ভবন না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই দুই শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীকে ঝুঁকির মধ্য দিয়েই দীর্ঘদিন নিয়মিত ক্লাস করেছেন।
এরপর প্রায় দুই বছর মাঠে ক্লাস করার পর শিক্ষার্থীদের জুটেছে একটি টিনসেটের চার কক্ষের ক্লাস রুম। তবে এই বর্ষার ও গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরাসহ শিক্ষকরা। ছয় মাস আগে নতুন ভবনের তালিকা হলেও এখনো তার কোন ব্যবস্থা নেই। একটু বৃষ্টি হলে পানি পড়ে ক্লাসরুমগুলো ভিজে যায়।
বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া অভিভাবক তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠাতে রীতিমতো ভয় পাচ্ছে। সমাপনিতে শতভাগ পাশ করা স্কুলটি ভবনের কারণে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে এবং শিক্ষার সকল কার্যক্রমে প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম থাকায় দপ্তরী দিয়ে চালাতে হয় ক্লাস।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৪২ সালে শুরু হওয়া ৬০নং উত্তর দুধখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৮সালে একটি ৪ কক্ষের নতুন ভবন নির্মান করা হয়। নির্মাণের ১৬ বছরের মধ্যে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের সৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালে বিদ্যালয়ের ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় ও পলেস্তারা খসে পড়ায় তিনটি শ্রেণীকক্ষ চার বছর ধরে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বাকি একটি কক্ষে এখন ঝুঁকি নিয়ে লাইব্রেরী হিসাবে কোন মতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে শিক্ষা অফিস থেকে মৌখিকভাবে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়।
এর পর প্রায় দুইবছর বিদ্যালয়ের মাঠে ক্লাস করাতে হয়েছে। বর্তমানে এলাকাবাসী ও ম্যানেজিং কমিটির উদ্যোগে স্কুলের মাঠের পাশে ৪কক্ষের একটি টিনসেট তৈরি করে দিয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের ভবন ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক সমস্যা, তার মধ্যে বৃষ্টি হলে টিন সেটের কক্ষে পানি ঢুকে যায়, ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় ক্লাসরুম কম, টেবিল বেঞ্চের সংকট, এই গরমে শিক্ষকরা হাত পাখা নিয়ে শ্রেনী কক্ষে পাঠদান করছে। তবে ছাত্র-ছাত্রীরাসহ শিক্ষক-শিক্ষিকারা গরমে অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষকের সংকট রয়েছে।
বিদ্যালয়ে প্রায় ২শত ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও শিক্ষক রয়েছে ৪জন, তার মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দুইজন শিক্ষক আছে পিটিআই ট্রেনিংএ, একজন রয়েছে ছুটিতে, মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবে বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের দপ্তরী দিয়ে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাস করানো হচ্ছে। তাও বেশীরভাগ সময় ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষক না থাকায় অলস সময় পাড় করে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনে আগে থেকে ধরা ফাটল ছাড়াও কয়েকটি পিলার ও দেয়ালে নতুন করে ফাটল ধরায় যে কোন সময়ে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষকসহ ছাত্রছাত্রীরা। যে কোনো সময় স্কুল ভবনটি পড়ে যেতে পারে এই ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস চলাকালীন ভবনের দিকে চেয়ে ক্লাস করে। এতে করে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
৫ম শ্রেণীর ফারহানা আক্তার ও জান্নাতুল আক্তার বলে, ‘ক্লাস করতে খুব ভয় করে। কিন্তু লেখাপড়া শেখার জন্য জন্য ভয় নিয়েও ক্লাস করেছি। দুই বছর মাঠে ক্লাস করেছি। এখনও আমাদের কোন নতুন ভবন হয় নাই। আমাদের সরকারের কাছে দাবী আমদের একটি সুন্দর নতুন ভবন যেন দেয়া হয়।
৪র্থ শ্রেণীর হালিমা , তানহা, জান্নাত বলে, আমাদের চেয়ার নাই, টেবিল নাই, আমরা নিচে বসে ক্লাস করি। এই গরমে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের ক্লাসে কোন ফ্যান নাই। আমরা নতুন একটি ভবন চাই।
’৩য় শ্রেণীর সুমাইয়া বলে, ‘ছাদের পলেস্তারা খসে গায়ের ওপর পড়ে।’ আমরা সবসময় ভয়ে ভয়ে ক্লাস করেছি। আমাদের সঠিক পড়াশুনা করার ব্যবস্থা যেন সরকার করে দেয় ।
৫ম শ্রেনীর ছাত্র মাহাদী বলেন, সরকারের কাছে একটাই দাবী আমরা একটি নতুন ভবন চাই। আমরা ভালমত পড়াশুনা করতে চাই। আমরা এই দেশকে একটি সুন্দুর দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।
৬০নং উত্তর দুধখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারহানা ইয়াসীন জানান, গত দুই বছর আমরা মাঠে ক্লাস নিয়েছি। তবে শিক্ষকদের বসার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই লাইব্রেরী ও প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকদের লাইব্রেরী হিসাবে ব্যাবহার করছি।
এর আগে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের এই বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে নিয়েছে। আমাদের বিদ্যালয় অনেক বছর ধরে শতভাগ পাশ সহ জিপিএ ৫ পেয়ে আসছে। আমরা একটি সুন্দর ভবন চাই। যেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে পড়াশুনা করতে পারবে।
৬০নং উত্তর দুধখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি আ.রব তালুকদার বলেন, আমাদের এই ভবনটি অতি জরুরি ভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তা না হলে এই বর্ষার সময় আসলে টিনসেটে ক্লাস করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন আমাদের নতুন একটি ভবন যেন দেয়া হয়।
মাদারীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাকিল আহম্মেদ বলেন, বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা আমি জানি। গত ৬মাস আগে নতুন ভবনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে বর্তমানে ঐস্কুলে এলাকাসহ কমিটির উদ্যোগে একটি টিনসেট করে দেয়া হয়েছে। সেখানেই ক্লাস করা হচ্ছে। তবে আমি চেস্টা করবো যত তাড়াতারী কিছু একটা করার। তবে জেলা শিক্ষা অফিসার স্যারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের যে ফলাফল অত্যান্ত ভালো, তবে বিদ্যালয়ে নতুন কোন ভবন নেই, আমরা অতি শ্রীঘই চেস্টা করবো বিদ্যালয়টির নতুন একটি ভবন দেয়ার, যাতে ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশুনার কোন প্রকার সমস্যা না হয়।
সতর্কবাণীঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment