‘সংবিধানের ১৮নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পতিতাবৃত্তি নিরসনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু ৪৪ বছর ধরে রাষ্ট্র তাদের জন্য কী করেছে? যদি তুমি পতিতাবৃত্তি সমর্থন না করো তাহলে তাদের কর্মের ব্যবস্থা করো।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘যৌনকর্মীর জীবন ও জীবিকার অধিকার বিষয়ক গণশুনানি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান বিচারকের বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহামান এ দাবি জানান। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সেক্সওয়ার্কারস নেটওয়ার্ক, সংহতি এবং সোয়াসা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ড. মিজান বলেন, ‘সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের সমান অধিকার রয়েছে। অথচ আমরা কি দেখছি, যৌনকর্মীদের মামলা নেয়া হয় না। দিনের পর দিন তারা মামলার জন্য যাচ্ছেন। উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে।’
ড. মিজান বলেন, ‘সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের সমান অধিকার রয়েছে। অথচ আমরা কি দেখছি, যৌনকর্মীদের মামলা নেয়া হয় না। দিনের পর দিন তারা মামলার জন্য যাচ্ছেন। উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে।’
কোথাও সংবিধান মানা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে যা কিছু লিপিবদ্ধ আছে তার উল্টো পথে চলছে দেশ। এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। মানবাধিকার কর্মীরা এটা মেনে নেবে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘৪২নং অনুচ্ছেদে সম্পত্তির অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এখানে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তির অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অথচ আমরা কি দেখছি, যৌনকর্মীদের সম্পত্তি হুমকি দিয়ে, জোর করে লুট করা হচ্ছে। আর রাষ্ট্র তাকিয়ে তাকিয়ে সেই তামাশা দেখছে।’
ড. মিজান বলেন, ‘যেসব যৌনকর্মী শেষ পর্যন্ত এই পেশা বেছে নিয়েছেন তার পেছনে অত্যন্ত দুঃখ, কষ্ট ও বেদনার ঘটনা রয়েছে। এই পেশা বেছে নেয়ার পেছনে যদি কোনো ব্যর্থতা থেকে থাকে তাহলে সেটা যৌনকর্মীদের নয়, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারের।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সমাজে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানবাবিধকার লঙ্ঘনের এই অবস্থাকে আর মেনে নেয়া যায় না। ইংরেজিতে একটা কথা আছে- এনাফ ইজ এনাফ। যথেষ্ট হয়েছে আর নয়, রাষ্ট্র তুমি এবার সংযত হও। তোমাকে সংযত হতেই হবে। কেননা এ রাষ্ট্র আমার, আমাদের সবার।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও মৌলিক অধিকারগুলো যৌনকর্মীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। তারা এ থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।’
রাষ্ট্রের কর্তার কাছে তিনি বলেন, ‘যৌনকর্মীদের ওপর কেন পুলিশি নির্যাতনের কথা আমাদের শুনতে হবে?’
এসময় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাস্টের কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, নারীপক্ষের সদস্য ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম। ইকোনোমিক ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন খান আফরিন।
অনুষ্ঠানে ড. মিজান কয়েকটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তাহলো-
১. রাষ্ট্রকে যৌনকর্মীদের সামাজিক দায়ভারের ব্যর্থতায় অভিযুক্ত করা হলো।
২. পুনর্বাসন না করা পর্যন্ত যৌনকর্মীদের স্বীকৃতি দিতে হবে।
৩. পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. যৌনকর্মীদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আদালত এবং বিচারকদের আরো সংবেদনশীল হতে হবে, শুধুমাত্র রি-অ্যাক্টিভ না হয়ে আপনার প্রো-অ্যাক্টিভ হবেন।
৬. লিগ্যাল-৮ থেকে যৌনকর্মীদের আইনগত সহায়তা দিতে হবে।
৭. সংবিধানে যৌনকর্মীদের সব অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৮. পতিতাবৃত্তি কেন্দ্রিক সব শাস্তিমূলক আইন বাতিল করতে হবে।
৯. যৌনকর্মীদের আইনী সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
১০. যৌনকর্মীরা অনুগ্রহ করে নির্যাতনের দলিল-দস্তাদি নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কর্তৃক অভিযোগ দায়ের কর। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রয়োজনে যৌনকর্মীদের হয়ে আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি প্রশাসনিক সব ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য থাকবে।
১১. যারা সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত হবে যৌনকর্মীদের পাশে তাদের দাঁড়াতে হবে। শুধুমাত্র ধর্মের বাণী দিলে চলবে না।
১২. যৌনকর্মী অধিকার রক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে। আর এর নেতৃত্বে থাকবে যৌনকর্মীরাই।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment