রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবার দুই কোটি ২০ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এ লক্ষ্যে আগামী শনিবার (২৫ এপ্রিল) সারা দেশে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পালন করবে সরকার।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক সংবাদ সম্মেলনে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরেন।
ওই দিন ৬-১১ মাস বয়সী সব শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী সব শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
শিশুদের ভরাপেটে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কাঁচি দিয়ে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের মুখ কেটে এর ভেতরে থাকা তরল ওষুধ চিপে খাওয়ানো হবে। জোর করে বা কান্নারত অবস্থায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো ঠিক হবে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, ছাত্র শিক্ষক, সাংবাদিক সবার সার্বিক সহযোগিতায় দেশব্যাপী এক লাখ ২০ হাজার স্থায়ী কেন্দ্রসহ অতিরিক্ত ২০ হাজার ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান আগামী ২৫ এপ্রিল রোজ শনিবার জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন করতে যাচ্ছে।
ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, ব্রিজের টোল, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, খেয়াঘাট ইত্যাদি স্থানে অবস্থান করবে। প্রতিটি কেন্দ্রে কমপক্ষে তিন জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালন করবেন।
দুর্গম এলাকায় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সফল করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে।
ক্যাম্পেইন দিবসে এবার শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে ঘরে তৈরি সুষম খাবার খাওয়ানোসহ অন্যান্য পুষ্টিবার্তা প্রচার করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী।
কার্যক্রমকে সাফল্যমণ্ডিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভাগ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে অবহিতকরণ সভা করা হয়েছে।
ক্যাম্পেইনের উপকারিতা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানোর ফলে শিশু যে শুধু মাত্র রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা পায় তা নয়। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখা, শর্করা জাতীয় খাদ্যের স্বাভাবিক পরিপাকে সাহায্য, শরীরের ত্বক, হাড়, দাঁতের গঠন ও সুস্থতা রক্ষায় সহায়তা; ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল এবং হামের জটিলতা কমায়।
আমরা আর অপুষ্ট শিশু দেখতে চাই না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অপুষ্টিজনিত রাতকানা রোগ বা অন্ধত্বও চাই না। অন্ধত্ব একটি পরিবারের জন্য অভিশাপ, তথা একটি দেশের জন্য বোঝা।
বছরে দু’বার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাইয়ে অন্ধত্ব প্রতিরোধ, শিশুর দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত, সব ধরনের মৃত্যু হার ২৪ শতাংশ ও হামজনিত মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব এবং ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু হার ৩৩ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারি।
ক্যাম্পেইন চলাকালে কোনো কুচক্রী মহল নেতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে এই কার্যক্রমকে যাতে ব্যাহত না করতে পারে সেজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর হার শতভাগ উন্নীতের ফলে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত রাতকানা রোগের হার শতকরা এক ভাগের নিচে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে জন্মের পর পূর্ণ ছয় মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর প্রচার কার্যক্রম গ্রহণের ফলে শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বেড়েছে, যা বর্তমানে শতকরা প্রায় ৬৪ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পর্যালোচনার জন্য ক্যাম্পেইনের দিন প্রতিটি উপজেলায়, জেলায় ও কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচাক দীন মো. নুরুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment