মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যুগ্ম-কর কমিশনার ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণ ও চাকরি জীবনে সুবিধা লাভের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ চিঠি পাঠান উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিন। চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে আগামী ১১ জুলাইয়ের মধ্যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। দুদক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি জানায়, যুগ্ম-কর কমিশনার (কর আপিল অঞ্চল-৪, ঢাকা) ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণের অভিযোগ আসে।
অভিযোগে বলা আছে, তিনি জালিয়তির মাধ্যমে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করে তা দিয়ে চাকরি জীবনে সুবিধা ভোগ করছেন। মুজিবনগর সরকারের একজন কর্মচারী হিসেবে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম প্রথমে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের কর বিভাগে অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ১৯৯১ সালের ২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা কোটা কাজে লাগিয়ে সরাসরি সহকারী কর-কমিশনার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে তার বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণের অভিযোগ এলে তা আমলে নিয়ে ২০০২ সালের ১ জুলাই কুমিল্লা জেলা প্রশাসক বরাবর অনুসন্ধানের জন্য চিঠিও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই অনুসন্ধান আর হয়নি।
এসএম জাহাঙ্গীর আলমের এসএসসি সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৫৫ সালের ১০ জুলাই। মুজিবনগর সরকারের সময় তার বয়স ছিল ১৬ বছরেরও কম। সে সময়েও চাকরিতে যোগদানের সর্বনিম্ন বয়স ছিল ১৮ বছর। সেই হিসাবে ওই বয়সে মুজিবনগর সরকারের আমলে তার চাকরি হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এছাড়া মুজিবনগর সরকারের যে ৫০৯ জনের কর্মচারী তালিকা আছে সেখানেও তার নাম নেই বলে দুদকে আসা অভিযোগে বলা আছে।
দুদক সূত্র আরো জানায়, যুগ্ম-কর কমিশনার ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি আমলে নিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এজন্য গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিনকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাই অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণাগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে আগামী ১১ জুলাইয়ের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
দুদকে আসা ওই অভিযোগে আরো বলা আছে, নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর সুবাধে বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। এর মধ্যে প্রথমে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের সাধারণ সম্পাদক হন। পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান, বর্তমানে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় ৪৭ লাখ ৬৮ হাজার ১৬৮ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। পরে এ অভিযোগে ২০০২ সালের ২০ আগস্ট দুর্নীতি দমন ব্যুরো বাদী হয়ে একটি মামলাও দায়ের করে। ২০০৩ সালে হাইকোর্ট ওই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে। বর্তমানে এ মামলার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment