সিলেটে শিশু রাজনকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা আর নাটোরে শিশু শাকিলকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করার ঘটনার মধ্যে এক জায়গায় মিল রয়েছে। নির্যাতনকারী দুই ব্যক্তিই সৌদি প্রবাসী। তারা দু’জনই শিশু নির্যাতনের নির্দেশদাতা। প্রথমে তারাই নির্যাতন শুরু করেন। পরে অন্যকে নির্দেশ দেন নির্যাতন চালিয়ে যেতে।
শিশু রাজনের মৃত্যুর পর নির্যাতনকারী কামরুল সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সৌদি আবরে পালিয়ে যান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। সেখানকার বাংলাদেশিরা তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
আটকের পর দোষ স্বীকার করে কামরুল বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়নি যে সে মারা যাবে। মনে থাকলে কি এমন করতাম? আমাকে শয়তানে পেয়ে বসেছিল। নইলে কি এমন করতাম?’
শিশু রাজন হত্যা মামলায় তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে এমন কথা শুনে কামরুল বলেন, ‘জানি না রে ভাই। ফাঁসি হলে কী করব আমি। আমাকে মাফ করে দাও ভাই।’
এদিকে, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দক্ষিণ মালিপাড়া গ্রামে শিশু শাকিলকে নির্যাতনের নির্দেশদাতা রবিউল করিম কিছুদিন আগে দেশে সৌদি আরব ফিরেছেন। এর মধ্যে গত ৩১ জুলাই স্থানীয় মুদি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হয় শিশু শাকিল (১২) ও অপর এক ব্যক্তি আবু সামাকে (৩৬)। পরে ২ আগস্ট বিকেলে প্রবাসী রবিউল করিমের নির্দেশে তাদের দু’জনকে সুপারিগাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর তিনি নিজেই বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন।
আইন হাতে তুলে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নির্যাতনকারী রবিউল করিম বলেন, ‘সামাজিকভাবে বিচার করা হয়েছে। এভাবেই আমাদের সামাজিক বিচার করা হয়। আমি থাকায় তাদের বেশি মারধর করা হয়নি। এখন আবার মানবিক কারণে আমিই তাদের চিকিৎসা করাচ্ছি।’
নির্যাতনকারী কামরুল আর রবিউলের কথার মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে। তারা দু’জনই শিশু নির্যাতনকে উপভোগ করেছেন। এর মধ্যে আবার রাজন হত্যাকারী কামরুল ‘শয়তানের’ ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন। তাদের এই মানসিক বিকৃতি অল্প আয়াসে বেশি অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার কারণে কি না তা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের গবেষণার বিষয়।
স্থানীয়রা বলছেন, সৌদি আরবে যে কোনো অপরাধের শাস্তি বড়ই নির্মম। সৌদি প্রবাসীরা দেশে এসে সেই চর্চাই করছেন। শুধু রাজন বা শাকিলই নয়, অনেক এলাকাতেই এমন নির্যাতনের ঘটনা অহরহই ঘটে চলেছে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ে চুরির অপবাদে নির্মম নির্যাতনে শিশু রাজনকে হত্যা করা হয়। এমনকি নির্যাতনের ঘটনা ভিডিওচিত্রে ধারণ করা হয়। ময়নাতদন্তের পর তার দেহে ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ১৩ জুলাই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন বলা হয়, আঘাতের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে শিশু রাজনের মৃত্যু হয়েছে।
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment