জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বজনদের নিয়ে স্বদেশ থেকে পালানো, হাঙ্গেরি সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা, খাদ্য ও পানীয় সংকট এবং শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুগ্রহে সে দেশে প্রবেশের সুযোগ। এক কালে যারা নরম বিছানায় সুখনিদ্রায় যেতেন, আজ তারা রেলস্টেনে ছোট তাবুর ভেতরে দিনাতিপাত করছেন। চারপাশে ঘিঞ্জি পরিবেশ, ময়লা-আবর্জনা। এর মধ্যে কী ভালোবাসার স্থান আছে? শত দুর্যোগ-দুর্ভোগেও পরস্পরের মধ্যেও যে ভালোবাসার উপস্থিতি থাকতে পারে হাঙ্গেরির একটি রেলস্টেশন থেকে শরণার্থীদের একটি ছবিতেই সে বিষয়টি তুলে তুলে এনেছেন চিত্র সাংবাদিক জিরস ইস্তাভান।
সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে হাজার হাজার শরণার্থী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এসব শরণার্থীদের অধিকাংশের গন্তব্য হাঙ্গেরি হয়ে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া। শরণার্থীদের ঢল ঠেকাতে গত মাসে রাজধানী বুদাপেস্টের কেলেতি আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনটি বন্ধ করে দিয়েছিল হাঙ্গেরি। এর ফলে সেখানে আটকা পড়ে আড়াই হাজার শরণার্থী।
৩০ আগস্ট কেলেতি রেলস্টেশনে গিয়েছিলেন সদ্য ফটোগ্রাফিতে হাতেখড়ি হওয়া ৩০ বছরের জিরস ইস্তাভান। গণমাধ্যমে শরণার্থীদের দুর্ভোগের ছবি দেখে অবস্থাটা বাস্তবে পর্যবেক্ষণের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সময়টা ছিল সকাল সাড়ে ৮ টা। চারপাশটা বেশ শান্তিপূর্ণই ছিল। আমি কৌতুহলি ছিলাম। পরিস্থিতির তীব্রতা যেখানে কম এ ধরণের একটি জায়গা খুঁজছিলাম আমি, কারণ অবস্থাটা ছিল খুবই বেদনাদায়ক।’
আর ঠিক এ সময়ে চমৎকার একটি ছবি পেয়ে যান ইস্তাভান। চারপাশে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরণার্থীরা হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে, কেউবা বসে সামনের দিনগুলিতে কী হবে সেই দুশ্চিন্তাই করছেন। তবে এতো কিছুর ভীড়ে একটি নারী ও একটি পুরুষ ছো্ট্ট তাবুটির ভেতরে পরস্পরকে গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে চুমু দিচ্ছেন। কেবল এই একটি দৃশ্যই পুরো পরিস্থিতির চিত্রটা কিছুক্ষণের জন্য হলেও বদলে দিয়েছে। এই ছবিটি যেন বলছে, যত দুর্যোগই আসুক, ভালোবাসা সবখানেই আছে।
ইস্তাভান বলেন,‘ আমি মনে করি এই স্টেশনে থাকা প্রত্যেক শরণার্থীর একটি সুখকর মুহূর্ত রয়েছে। প্রত্যেকেই দুঃখী ও হতাশ। কিন্তু ভালোবাসা আছে সব জায়গায়।’
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment