রাজধানীর মিরপুর এলাকার মনোয়ারা বেগমের শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তান ফারুক হোসেনকে নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছিলেন। ভিটে বাড়ি না থাকা মনোয়ারা সন্তান নিয়ে মাথাগোঁজা ঠাঁইয়ের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। সরকারের নির্দেশে ২০০১ সালের ১১ নভেম্বর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ মিরপুর-১২ নম্বরে প্রতিবন্ধী সন্তান ফারুক হোসেনের অনুকূলে মনোয়ারা হোসেনকে একটি প্লট বরাদ্দ দেয়। তবে সরকারের ওই প্লট এখন তার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর হুমকি গুণতে হচ্ছে তাকে। জায়গা দখল করা মাদকব্যবসায়ীদের ভয়ে মিরপুর ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মনোয়ারা বেগম।
সূত্র জানায়, ১৯৭৫ সাল থেকে তিনি রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বরে বসবাস করছিলেন। অভাব অনটনের সংসারে কোনো মতে টিন দিয়ে মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই করেছিলেন। এমতবস্থায় ১৯৮৬ সালে তিনি তার প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য সরকারের কাছে তার থাকার জায়গাটি বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে তার থাকার স্থানটি বরাদ্দ দেয়ার আদেশ দেয়। আর এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ টি-১২৩/২০০১ স্মারকে তাকে আড়াই কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেয়। যার নম্বর ২৪১/২৪২। সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি মনোয়ারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়। কিন্তু বিপদ যেন কিছুতে পিছু সরছিল না তার। একসময় স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছিলেন না। এমন সময় স্থানীয় শহিদুল ইসলামের কাছে টাকা ধার চান তিনি। চতুর শহিদুল তাকে টাকা দেয়ার প্রমাণ রাখার জন্য ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত নেয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই শহিদুল ওই জমি বিক্রি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তাদেরকে জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে দেয়।
একদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী মারা যাওয়া অন্যদিকে সরকারিভাবে পাওয়া জায়গাটিও হারিয়ে এক প্রকার পাগল হয়ে পড়েন মনোয়ারা বেগম। স্বামীর মৃত্যু শোকে কাতর মনোয়ারা জায়গাটি উদ্ধারে ধর্ণা দিতে থাকেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু অসহায় মনোয়ারার কথা কেউ শুনে না। এরই মধ্যে প্লট দখল করা শহিদুল গৃহায়ন কর্মকর্তাকে হাত করে বরাদ্দ পাওয়া ফাইলটিই গায়েব করে দেন। পরে মনোয়ারা বেগম বিষয়টি জানতে পেরে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা তাকে বরাদ্দের ফাইলটি হারিয়ে গেছে বলে জানায়। কর্তৃপক্ষের কথা শোনার পর মনোয়ারা বেগম শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। এরপরও তার পথচলা শেষ হয়নি। গত ২০১২ সালে শহিদুল মারা গেলে তার ছেলে মাশায়েদুল ইসলাম রুবেল ওই প্লটে বিল্ডিং উঠান।
জানা যায়, বর্তমানে মনোয়ারা বেগম তার প্লট
উদ্ধারে তৎপর হলে রুবেল ও তার সহযোগীরা একের পর এক হুমকি দিতে থাকে।
একপর্যায়ে তার উপর আক্রমণও করে। এসব ঘটনায় মনোয়ারা বেগম পল্লবী থানায়
একাধিক জিডি করেন। বর্তমানে অব্যাহত হুমকির প্রেক্ষিতে তিনি তার সন্তান
নিয়ে ওই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে আছেন।
ভুক্তভোগী মনোয়ারা বেগম বলেন,
‘আমার সন্তান প্রতিবন্ধী দেখে সরকার আমাকে প্লট দিল। অথচ দখল করে খাচ্ছে
শহিদুলের ছেলে। আমি ওই এলাকায় বসবাস করি বলে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
উপায় নেই বলে আজ আমি বাস্তুহারার মতো ঘুরছি।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘সরকার জায়গা দিল
আমাকে, সেই কাগজ আমার কাছে। অথচ যারা আমাকে জায়গা দিল সেই গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ
বলছে তাদের কাছ থেকে কাগজটি হারিয়ে গেছে। এই কথা কারও বিশ্বাস হবে?’
তিনি আরো বলেন, ‘জায়গাটি তারা ভোগ দখল করলেও
আমার নামেই বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল আসে। আবার খাজনাও দিতে হয় আমাকে। এটি
কোন ধরনের অন্যায় অবিচার। আর কোথায় গেলে এই অন্যায়ের বিচার পাবো?’
কে এই শহিদুল
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহিদুল মিরপুর-১২ নম্বর এলাকার একজন চিহ্নিত মাদকের গডফাদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের বড় বড় চালান আসতো তার কাছে। তার কাছ থেকেই বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে অন্য স্থানে সরবরাহ হতো। ২০০৭ সালের শেষের দিকে প্রায় ৪ কোটি টাকার হেরোইনের একটি বড় চালানসহ তাকে আটক করে র্যাব। বিপুল পরিমান এই হেরোইন উদ্ধার ও শহিদুলের আটকের খবর বিভন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহিদুল মিরপুর-১২ নম্বর এলাকার একজন চিহ্নিত মাদকের গডফাদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের বড় বড় চালান আসতো তার কাছে। তার কাছ থেকেই বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে অন্য স্থানে সরবরাহ হতো। ২০০৭ সালের শেষের দিকে প্রায় ৪ কোটি টাকার হেরোইনের একটি বড় চালানসহ তাকে আটক করে র্যাব। বিপুল পরিমান এই হেরোইন উদ্ধার ও শহিদুলের আটকের খবর বিভন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়।
মাদকব্যবসা ছাড়াও শহিদুল বিএনপির রাজনীতির
সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরপর ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এক সময়ে টাকার
জোরে বাগিয়ে নেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটও। মূলত টাকার জোরে হয়ে
যান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০১২ সালে হঠাৎ করেই তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর পর ভুয়া এই মুক্তিযোদ্ধাকে দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় সম্মাননাও। বাবার
মৃত্যু হলেও ছেলে রুবেল এখনো রয়েছেন বাবার পথেই।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ শিকদার এ
বিষয়ে বলেন, ‘সে যে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আমরা এর প্রতিবাদ করে
আসছিলাম। সে মারা গেছে। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই চলছে। সে টিকবে
না। আর সে যে মাদকব্যবসায়ী ছিল সেটা সবাই জানে।’
এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, শহিদুল কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। অনেকটা জোর করে সে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে। সে মাদকব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। মূলত তার টাকার জোরেই ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলে না। শহিদুল মারা গেলেও তার ছেলে এখন এলাকার মাদকব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।
এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, শহিদুল কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। অনেকটা জোর করে সে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে। সে মাদকব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। মূলত তার টাকার জোরেই ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলে না। শহিদুল মারা গেলেও তার ছেলে এখন এলাকার মাদকব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।
পল্লবী থানার ওসি দাদন ফকির
বলেন, ‘মনোয়ারা বেগমের ছেলে আবুল হোসেন রহমান সর্বশেষ গত সপ্তাহে একটি জিডি
করেন। জিডিটি তদন্ত করছেন এসআই কামরুল হোসেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে
ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর মাশায়েদুল ইসলাম রুবেল মাদকব্যবসায়ী কি না খোঁজ
নেবো। যদি সে মাদকব্যবসায়ী হয় তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
সতর্কবাণীঃ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
No comments:
Post a Comment