দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে মুগ্ধ সারা ক্রিকেট বিশ্ব। সারা বিশ্বের ক্রিকেটবোদ্ধাদের প্রসংশায় ভাসছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। আর যারা এ সাফল্য বয়ে এনেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সৈয়দ রাসেল। ৩ জুলাই এই দিন যশোরের মাটিতে জন্ম নেই বাংলার বাঘ ক্রিকেটার সৈয়দ রাসেল।
বাহাতি ব্যাটসম্যান ও বা-হাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার সৈয়দ রাসেল ১৯৮৪ সালের ৩ জুলাই যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার পারবাজার গ্রমে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল আওয়াল এবং মাতার নাম রেখা পারভিন। সৈয়দ রাসেল দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। সৈয়দ রাসেলের ডাক নাম রাসু। মা তাকে রাসু বলেই ডাকতেন।
সৈয়দ রাসেল ওরফে রাসু শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঝিকরগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৯৯ সালে তিনি ঝিকরগাছা এম, এল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেন। ২০০৪ সালে তিনি ঝিকগাছা শহীদ মশিয়ুর রহমান ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। এবং তিনি একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ কমপ্লিট করেন।রাসু ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৮ সালে এম, এল পাইলট হাইস্কুল থেকে ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালে ঝিকরগাছা জাগরনী সংসদের পক্ষ থেকে যশোর যুব টিমে এবং আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এই বছরেই খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম থেকে ডাক পড়ে। খুলনা বিভাগীয় টিমে খেলে তিনি অপরাজিত চাম্পিয়ন হয়। ২০০১ সালে অনুর্ধ ১৭ কাপ ক্রিকেট বাংলাদেশ টিমে খেলার জন্য ডাক পড়ে তার এবং স্টান্ডবাই খেলয়ার হিসেবে চান্স হয় তার ।
জাতীয় দলে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৫ টেস্ট খেলাই অভিষেক ঘটে এই বা-হাতি পেসারের। একদিনের খেলায় অভিষেক হয় শ্রীলঙ্কার সেই সফরেই। আর টি-২০ খেলায় অভিষেক ঘটে ১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে। ২০০৫ সালের টেস্ট খেলার অভিষেক হলে, ম্যাচ খেলেছেন ৬ টি, রান করেছেন ৩৭।
বল করেছেন ৮৭৯ টি রান দেন ৫৭৩ আর উইকেট পেয়েছেন ১২ টি।
একই সালে একদিনের খেলাই অভিষেক হলেও ৬ বছরে ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ৫২ টি ম্যাচ । বল করেছেন ২৬৫৭ টি রান দিয়েছেন ২০৫১ আর উইকেট নিয়েছেন ৬১ টি। ম্যাচের তুলনায় উইকেট খুব বেশি না হলেও রান চেকের কাজ টা খুব ভালো পারতেন যশোরের রাসু।
রাসেল ৪৪১ ওভার বল করেছেন যার মধ্যে ৪১ টাই মেডেন। ইকোনমি রেট সাড়ে ৪। কম রান দেওয়ার কারণে দর্শকরা তাকে কিপ্টা রাসেলও বলে ডাকতেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় হওয়ার পিছনে বিশেষ ভূমিকা আছে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়লাভ। ম্যাচে ভারত প্রথম ৩০ ওভারে করেছিল মাত্র ৮০ রান। যার অনেকটা কৃতিত্ব ছিল রাসেলের। ১০ ওভার বল করে ২ মেডেন সহ মাত্র ৩১ রান দিয়েছিলেন। রাসেলের বলে নাকানি-চুবানি খাওয়া ভারতের ব্যাটসম্যানরা। ওই বিশ্বকাপে যখন বাংলাদেশি বাঘেরা দক্ষিন আফ্রিকা কে হারালেন ওই ম্যাচেও ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে নিয়েছিল ২ টি উইকেট। এছাড়া টি-২০ ক্রিকেটেও বিশেষ কার্যকরি ছিল রাসেলের স্লো মিডিয়াম পেস। টি-২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ম্যাচে প্রথম ওভারেই রাসেল ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিস গেইলকে। বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টি-২০ জয় সেই ম্যাচেই।
২০১০ সালের জুলাই থেকে জাতীয় দলের বাইরে এই জাতীয় ক্রিকেটার । যশোর-বেনাপোল রোডের ঝিকরগাছা বাসস্টান্ডের নিশানা শপিং সিটিতে কাপড়ের দোকান দিয়েছেন রাসেল। ‘হাউজ অফ ফ্যাশান’ দোকানটির প্রোপাইটার এই জাতীয় ক্রিকেটার ।
এই জন্মদিনে ক্রিকেটপ্রেমীদের একটাই আশা আবারো সৈয়দ রাসেল ফিরে আসুক আমাদের মাঝে ক্রিকেট নিয়ে।
No comments:
Post a Comment